প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ভাঙ্গায় সাজ সাজ রব
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আসছেন। ভাঙ্গার জনসভা স্থল ও রেল জংশনসহ রাস্তার মোড়ে মোড়ে তাই শোভা পাচ্ছে অসংখ্য তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে লেখা হয়েছে নানা স্লোগান।
গত বছরের ২৬ জুন সকাল ৬টা থেকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। বাকি ছিল রেল যোগাযোগ। সেই জল্পনা-কল্পনারও অবসান ঘটছে আগামীকাল। এর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে গোটা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সূচনা হচ্ছে নবদিগন্তের। রেল জংশন উদ্বোধন ও জনসভাকে ঘিরে সাধারণ জনগণ ও নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দ আর উদ্দীপনা বাড়ছেই।
পদ্মা সেতু চালুর এক বছর দুই মাস পর আসছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আগামীকাল ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে রেল চলাচল শুরু হবে। নতুন এ রেলপথেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ চালু হচ্ছে আগামীকাল। আগামী বছরের জুনে যশোর পর্যন্ত রেল চালুর ঘোষণা দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। মোট ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণের কাজ করছে ঠিকাদার চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিআরইসি)।
সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলের বিষয়ে কথা হলে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র আইয়ুব আলী বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের স্বপ্নপূরণ করেছে। জীবনযাত্রার মানসহ নানা দিক দিয়ে অনেক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরই রেল চলবে। অনেক আনন্দ লাগছে, গর্ব হচ্ছে।’
এলাকার কৃষক আবু বকর ছিদ্দিক জানান, ‘রেলপথ চালু হলে আমরা কৃষি পণ্য বেশি দামে বিক্রি করতে পারব।’
এ বিষয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই সহজ হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সবক্ষেত্রে জীবনমানের পরিবর্তন হয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের একটি নয় কয়েকটি স্বপ্নপূরণ হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম হাবিবুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমনের খবরে এলাকাবাসী আনন্দিত। ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে তোরণ নির্মাণসহ ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, ট্রেন চালুর পর দিনে প্রায় দুইবার ফরিদপুর-ঢাকা যাওয়া আসা করা যাবে। ট্রেন চালুর পর সড়কপথে যাত্রা আরও সহজ হবে। ট্রেন চালুর খবরে খুব ভালো লাগছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিম উদ্দিন বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচল শুরুর পর এলাকায় ব্যাপক পরিবর্তন হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনসভার নিরাপত্তা ও সার্বিক বিষয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমরাও পর্যবেক্ষণ করছি। এর ফলে এলাকার যেমন উন্নয়ন হবে, তেমন যাতায়াতের ভোগান্তির পাশাপাশি কমবে শিক্ষার খরচও। জিনিসপত্রের দামেও পড়বে ইতিবাচক প্রভাব।’
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় দফায় দফায় বৈঠক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। ভাঙ্গা এলাকাজুড়ে নিরাপত্তার জন্য জেলা পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠপর্যায়ে নজরদারি শুরু করেছে।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য বিপুল ঘোষ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ বিরাজ করছে। পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক অনন্য সৃষ্টি। ওই সেতুর রেললাইন উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন তিনি, যা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। এই রেললাইনটি উদ্বোধন হলে দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলার মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা আরও সহজ হবে।’
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে সামনে রেখে পুলিশ ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ঢাকা সদর দপ্তরের পরিকল্পনা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সোচ্চার রয়েছে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠন বিভিন্ন সভা, বিশেষ বর্ধিত সভা করেছে। এসব সভায় স্থানীয় নেতারা ছাড়াও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা যোগ দেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই জনসভায় কয়েক লাখ লোক যোগ দেবে।
ফরিদপুরের সর্বস্তরের মানুষ আনন্দিত-উচ্ছ্বসিত। এখন শুধু অপেক্ষার পালা।