হাইকোর্টে বেসিকের বাচ্চু ও তার স্ত্রী-সন্তানের জামিন আবেদন
প্রায় ৯৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ও তার স্ত্রী-সন্তান হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন। শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ছাড়া জামিন আবেদনকারী অন্যরা হলেন তার স্ত্রী শিরিন আক্তার, ছেলে শেখ শাহরিয়ার পান্না ও শেখ সাবিত হাই অনিক।
বিষয়টি আজ বুধবার (১১ অক্টোবর) গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
গত ৩ অক্টোবর প্রায় ৯৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ও তার স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক নুরুল হুদা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
বেসিকের যত কেলেঙ্কারি
২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পরপরই অনুসন্ধানে নামে দুদক।
ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণদানসহ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে।
প্রায় পাঁচ বছর অনুসন্ধান শেষে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে টানা ৫৬টি মামলা হয়। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় দায়ের করা এসব মামলায় আসামি করা হয় ১২০ জনকে। এর মধ্যে ঋণগ্রহীতা ৮২ জন, ব্যাংকার ২৭ ও ভূমি জরিপকারী রয়েছেন ১১ জন।
অনিয়মের মাধ্যমে দুই হাজার ৬৫ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান শাখা থেকে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখা থেকে ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান শাখা থেকে প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা এবং দিলকুশা শাখা থেকে ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। অভিযোগের বাকি অংশের অনুসন্ধান এখনও চলমান। এছাড়া বেসিক ব্যাংক সংক্রান্ত বিষয়ে আরও পৃথক চারটি মামলা করে দুদক।
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় যখন মামলা করা হয় তখন দুদক চেয়ারম্যান ছিলেন মো. বদিউজ্জামান। তিনি মামলার তদন্ত শেষ করে যেতে পারেননি। তারপর ২১০৬ সালের দুদক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান ইকবাল মাহমুদ। তার পাঁচ বছরেও বেসিক ব্যাংকের তদন্ত সম্পন্ন হয়নি। আর সংস্থাটির বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ ২০২১ সালে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান। তার আমলে মামলার তদন্ত শেষ করা হয়। এ মামলার তদন্ত করে চার্জশিট দিতে দুদকের ৮ বছর লেগে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে শেখ আবদুল হাই বাচ্চু চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত বেসিক ব্যাংক ৬ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকাই নিয়ম ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে। ফলে ২০১৪ সালে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণ করা হয়। সে বছরের ২৯ মে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিছুদিন পর ৪ জুলাই শেখ আবদুল হাই বাচ্চু পদত্যাগপত্র জমা দেন।