দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের পরিষেবায় সমতাভিত্তিক প্রবেশাধিকার জরুরি : রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, সবার জন্য দুর্যোগ সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়তে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের পরিষেবাগুলোতে সমতাভিত্তিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। আজ শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস’ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালনের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই’ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সারা বিশ্বেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা ও তীব্রতা অনেক বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে পৃথিবীর অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকেও প্রতিবছরই কোনো না কোনো বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।’
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘দুর্যোগে জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সরকারের নীতি-পরিকল্পনায় ইতোমধ্যে দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস কৌশল অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু এবং তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের অবহেলা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীরভাবে ব্যথিত করে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আগাম সতর্কবার্তা প্রচার ব্যবস্থা শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু ১৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে সিপিপি’র যাত্রা শুরু করেছিলেন, যারা আগাম সতর্কসংকেত প্রচার এবং সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের জানমাল রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র এবং মুজিব কিল্লা নির্মাণের কাজও তখন থেকেই শুরু হয়।’
রাষ্ট্রপ্রতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্যোগ মোকাবিলায় নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে আজ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবক এখন ৭৬ হাজার, যার মধ্যে ৫০ শতাংশ নারী সেচ্ছাসেবক। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী, বয়োবৃদ্ধ ও সমাজের পিছিয়ে থাকা দরিদ্র জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। ঝুঁকি হ্রাস ব্যবস্থায় বিনিয়োগ ও সামাজিক সুরক্ষার অভাবে দরিদ্র জনগণ তাদের সীমিত সম্পদের ব্যবহার করে দুর্যোগের ক্ষতি সামাল দিতে গিয়ে আরো দারিদ্র্যতায় নিমজ্জিত হয়।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, “দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘অসমতার বিরুদ্ধে লড়াই করি, দুর্যোগ সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়ি’ যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।” তিনি বলেন, ‘সবার জন্য সমানাধিকার, জনগণের মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে দক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের কাঙ্ক্ষিত সেবা তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমি আশা করি, দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসের মাধ্যমে একটি দুর্যোগ সহনশীল জাতি গড়ে তুলতে সকলের সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।’