তলে তলে আসলে কিছুই হয়নি : মির্জা ফখরুল
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তলে তলে নাকি সব হয়ে গেছে। বারবার এ কথা বলছে, আসলে কিছুই হয়নি। গোটা বিশ্ব তাদের বলছে, ক্ষমতা থেকে সরে গিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আজ শনিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে অনশন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, পূজার পর দুর্বার আন্দোলন করে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। গণতন্ত্র ও দেশকে বাঁচাতে হলে, খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। গণআন্দোলনেই এ সরকারকে বিদায় করা হবে।
এসময় নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের দুই নেতাকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
গণঅনশনে সংহতি প্রকাশ করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য করুণা ভিক্ষা করতে হচ্ছে। আপনাদের ওয়াদা করতে হবে, আমি ওয়াদা করব, তালা ভেঙে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশনেত্রীকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখনই বুঝেছি তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কারাগারে নেওয়া হয়েছে। সময় কিন্তু বেশি নাই। কারও জন্যই সময় নাই। খালেদা জিয়াকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান।
মির্জা আব্বাস অভিযোগ করে বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে। এটা বাইরে পাঠালে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এই জন্য তাকে বিদেশে পাঠাচ্ছে না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, রাজপথে যদি আমাদের ওপর আঘাত আসে, আমরা যদি পাল্টা আঘাত করতে না পারি, আমাদের উপর নির্যাতন আরও বাড়বে।
বিচারের নামে অবিচার করবেন না জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন আপনারা নির্বাচন করতে পারবেন না। আপনারা বাড়িতে থাকেন। বেতন বাতা নেন। আমরা সরকারকে বিদায় করি। তারপর নির্বাচন করবেন।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, তারা বড় বড় কথা বলেন৷ মুখের কথায় দেশ চলবে, মুখের কথায় কাজ হবে। আজকে আমরা অনশন করছি, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব।
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, এবারের লড়াই আমাদের বেঁচে থাকার লড়াই। ফ্যাসিবাদ বিদায় করার লড়াই। এই লড়াই আমাদের বিজয় হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে। অন্যথায় এই সরকারকে চরমমূল্য দিতে হবে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পূজার পর আরও শক্ত কর্মসূচি নিয়ে হাজির হব। এই অবৈধ দখলদার সরকারের মসনদ ভেঙে যাবে। সরকার পূজাকে কেন্দ্র করে হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা বাধাতে চায়। যাতে আমরা আন্দোলন করতে না পারি। কিন্তু এটা আমরা বুঝি। জনগণ আরও ভালো বোঝে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুচিকিৎসার দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে আশ শনিবার বেলা ১১টার দিকে এ অনশন শুরু হয়। ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তর ও দক্ষিণ এর আয়োজন করে।
ঢাকা মহানগর বিএনপি দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম এর সভাপতিত্বে আরও অংশ নেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম, জমিয়তে ওলামা ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দীন ইকরাম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, জাতীয় পার্টির মোস্তফা জামান হায়দার, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আবু তাহের, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জেএএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর প্রমুখ।
মির্জা ফখরুলকে জুস খাইয়ে অনশন ভাঙান অলি আহমেদ, মির্জা আব্বাসকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী এবং প্রফেসর ড. মাহবুব উল্লাহ অনশনকারীদের জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙান। এছাড়া সারা দেশে একই দাবিতে বিএনপি এ অনশন কর্মসূচি পালন করছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বিএনপি তিন ঘণ্টা এ কর্মসূচি পালন করে। দুপুর ২টায় এ কর্মসূচি শেষ হয়।