র্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু, তদন্ত প্রতিবেদনে হাইকোর্টের অসন্তোষ
র্যাবের হেফাজতে নওগাঁর সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট বলেছেন, প্রতিবেদনটি অস্পষ্ট। প্রতিবেদনে সুলতানা জেসমিনকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। তাকে গ্রেপ্তারের পর আত্মীয় স্বজনকে জানানো হয়েছিল কি না— সে বিষয়ে প্রতিবেদনে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
আজ রোববার (১৫ অক্টোবর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। পরে এ বিষয়ে জারি করা রুল শুনানির জন্য প্রস্তুতের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে রুল শুনানির জন্য আগামী ২৯ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তৌফিক সাজওয়ার পার্থ উপস্থিত ছিলেন।
পরে অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক সাংবাদিকদের বলেন, জেসমিনকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে তেমন কোনো তথ্য তদন্ত প্রতিবেদনে দেওয়া হয়নি। প্রতিবেদন দেখে হাইকোর্ট সন্তুষ্ট হননি। জেসমিনকে গ্রেপ্তারের পর আত্মীয়স্বজনকে জানানো হয়েছিল কি না? থানাকে অবহিত করা হয়েছিল কি না? এসব বিষয়গুলো স্পষ্ট করা হয়নি প্রতিবেদনে। তবে আদালত আগামী ২৯ নভেম্বর এ বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন।
এদিকে র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুসংক্রান্ত প্রকাশিত খবর গত ২৭ মার্চ হাইকোর্টের নজরে নিয়ে স্বপ্রণোদিত আদেশ চেয়েছিলেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। পরে আদালতের নির্দেশে ২৮ মার্চ তিনি হাইকোর্টে এ বিষয়ে রিট আবেদন দায়ের করেন। রিটে র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ ও র্যাবের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়। ওই দিনই রিট আবেদনের আর্জি তুলে ধরে রিটকারী মনোজ কুমার আদালতে বলেন, ‘এ ঘটনায় কোনো বিষয়ই বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। র্যাব গঠন করা হয়েছিল দাগী চোর-ডাকাত, মাদক চোরাকারবারি ধরতে। এই নারীকে (সুলতানা জেসমিনকে) আটক করা হয় ২২ মার্চ। আর ২৪ মার্চ তার মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই আইনে কাউকে গ্রেপ্তারের এখতিয়ার পুলিশের থাকলেও র্যাবের নেই। তাছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারা অনুসারে সুলতানা জেসমিনকে আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করা হয়নি।’
শুনানি গ্রহণ শেষে গত ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট কোনো মামলা ছাড়াই নওগাঁর সুলতানা জেসমিন (৪৫)কে র্যাবের হেফাজতে নেওয়া থেকে শুরু করে হাসপাতালে নেওয়ার আগ পর্যন্ত যে প্রক্রিয়া তা আইনগতভাবে কতটুকু সঠিক ছিল এবং র্যাবের কোনো এখতিয়ার ছিল কি না; তা তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। কমিটিতে নওগাঁর জেলা জজ পদমর্যাদার একজন এবং সেখানকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে রাখতে বলা হয়েছে। তদন্ত সম্পন্ন করে কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। তদন্তকালীন সময়ে জেসমিনকে আটকের সঙ্গে র্যাবের যেসব সদস্য জড়িত ছিলেন তাদেরকে দায়িত্ব পালন থেকে সরিয়ে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে মামলা ছাড়াই সুলতানা জেসমিনকে তুলে নেওয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। ওই আদেশ অনুযায়ী ২২ মে ৮ সদস্যের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।