অগ্নিকাণ্ডে ম্লান জেলে পরিবারের পূজার আনন্দ
মা আর মেয়ে মিলে বাজারে গিয়েছিলেন স্ট্রোক করে অসুস্থ গৃহকর্তার জন্য ওষুধ কিনতে। বাড়ি ফিরে দেখেন তাঁদের সব শেষ। অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে বসতবাড়িসহ ঘরে থাকা সব মালামাল। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার দিগনগর বাজার সংলগ্ন পবনবেগ মালোপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
সুজিত মালো (৬০) দরিদ্র এক জেলে। পাঁচ মাস আগে স্ট্রোক করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পর সেখানে দ্বিতীয় দফায় স্ট্রোক করেন তিনি।এখন বাড়িতে বসে কোনমতে চিকিৎসা চালাচ্ছেন। বসতভিটায় বসবাসের একটি মাত্র জরাজীর্ণ টিনের চৌচালা ঘর ছিল তাঁর। আজ সকাল ১০টার দিকে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় সেটি। বছরের বড় আয়োজন দুর্গাপূজার উৎসবে বসবাসের একমাত্র ঘরটি হারিয়ে দিশেহারা তিনি।
সুজিত মালোর উমা (২৭) ও সঞ্চিতা (২০) নামে দুই মেয়ে রয়েছে। তাঁদের বিয়ে হয়ে গেছে। একমাত্র ছেলে সঞ্জিবন (২৫) ঢাকায় একটি মাছের আড়তে কাজ করেন। পূজা উপলক্ষে বাজার-সদাই করে আজ সন্ধ্যায় তাঁর বাড়ি ফেরার কথা।
সুজিত মালো জানান, বড় মেয়ে উমাকে (২৭) নিয়ে তাঁর স্ত্রী সুমিতা (৪৫) সকালে আলফাডাঙ্গা বাজারে যান ওষুধ কিনতে। তিনি ঘরের বারান্দায় বসেছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি ঘরে পোড়া গন্ধ পেয়ে তাকিয়ে দেখেন বিদ্যুতের মিটার ও সুইচ বোর্ড থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যেই তাতে আগুন লেগে সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তাঁর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলেও আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। নিমেষেই সব মালামালসহ পুরো ঘর ভস্মীভূত হয়।
সুজিত মালো কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ঘরে একটা সংসারে যা থাকার সবই ছিল। তয় আগুন লাগার পর একটা পুরান লুঙ্গি ছাড়া আমার আর কিছুই নাই। কোনো মালামালই বের করতে পারিনি।’
খবর পেয়ে বোয়ালমারী থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি দলের পাশাপাশি আলফাডাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইউনুসের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে।
বোয়ালমারীর ফায়ার ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার আব্দুল খালেক বলেন, বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মতো হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খান সাইফুল ইসলাম এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন এবং সহায়তার আশ্বাস দেন।