অনলাইনে ঋণ দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, গ্রেপ্তার ৫
অনলাইনে চকটদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যাংকের লোন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল একটি চক্র। এমন অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল ও বনশ্রী এলাকা থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিএমপি ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগ।
গ্রেপ্তাররা হলেন–মো. আরিফ হোসেন রনি, মো. সুমন, রাসেল, হাবিব এবং খন্দকার মো. ফারুক। তারা সাবেক একজন যুগ্ম সচিবের স্ত্রী, ছেলে এবং ছেলের স্ত্রীসহ আরও দুজন।
রোববার (২২ অক্টোবর) রাতে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুর রহমান আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সবার প্রতি সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, ‘ঋণ বা আর্থিক কাজের জন্য সরাসরি ব্যাংকে যোগাযোগ করুন। আর কোনো আর্থিক লেনদেনের আগে ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে যাচাই করে নিতে হবে। আর ফেসবুকে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আগে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালো করে যাচাই করে নেবেন।’
ডিবির ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের ইনচার্জ এডিসি মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে সাবেক যুগ্ম সচিবের স্ত্রী, ছেলে ও ছেলের স্ত্রীসহ পাঁচজনকে গত শুক্রবার গ্রেপ্তার করে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ জানায়, আসামিরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন ধরে মতিঝিলের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে অফিস খুলে বিভিন্ন ভুয়া চেক, বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণের ভুয়া স্যাংশন লেটার, ষ্ট্যাম্পে চুক্তিনামা, ভিজিটিং কার্ড, ভুয়া সিল ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এডিসি সাইফুর রহমান আজাদের দাবি, গ্রেপ্তারকৃত মো. সৈয়দ আরিফ হাসান রনি সাবেক যুগ্ম সচিবের ছেলে। তিনি নিজেকে আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তিনি বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এসএমই লোন কৃষি লোন, হোম লোন, প্রবাসী লোন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন পেইজের মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিতো। বিজ্ঞাপনে প্রভাবিত হয়ে হয়ে আগ্রহী গ্রাহকরা যোগাযোগ করলে আরিফ হাসান প্রসেসিং ফি, সার্ভিস চার্জ, ডিসবার্সমেন্ট ফিসহ নানা ধরনের চার্জের কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেয়।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই চক্রটি বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য তাদের বানানো বিভিন্ন ব্যাংকের নকল আবেদনপত্র, স্যাংশন লেটার দিতো। এভাবে তারা বিভিন্নভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিতো। তাদের প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে সাধারণ গ্রাহকদের প্রায় ছয় মাস সময় লেগে যেত। এর মধ্যে আরিফ হাসান তার অফিস পরিবর্তন করে নতুন জায়গায় আবার নতুন অফিস খুলে বসতো। ব্যাংক লোনের বাইরেও এই চক্রটি বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা, ট্রাক্স ফাইল, ট্রেড লাইসেন্স করে দেওয়া, কোম্পানি নিবন্ধন করে দেওয়ার নামে প্রচুর পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিত।’
মো. সাইফুর রহমান আজাদ আরও বলেন, ‘নতুন জায়গায় অফিস দিয়ে নতুন ধরনের প্রতারণায় যুক্ত হতো এই চক্রটি। তাদের প্রতারণার টাকা দিয়ে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসাও খুলে বসেছিল। আরিফ হাসান মূলত ফেইসবুকে চটকদার বিজ্ঞাপন এবং বিভিন্ন এলাকায় তার এজেন্টের মাধ্যমে গ্রাহক জোগাড় করতো। তার এসব প্রতারণার কাজে মূল আসামি আরিফ হাসান রনি, তার স্ত্রী আফরোজা আক্তার বেবী, মা সেলিনা চৌধুরী এবং অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত রয়েছে। তার স্ত্রীকে মাঝে মাঝে কোম্পানির চেয়ারম্যান, পরিচালক ইত্যাদি পরিচয় দিত। অ্যাডভোকেট মোজাম্মেলকে মাঝে মাঝে কোম্পানির মালিক হিসেবেও পরিচয় দিতেন।’
পুলিশ জানায়, আরিফের নামে আগে দুটি মামলা রয়েছে। অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল আইনি বিষয় দেখেন। তাদের কাছে প্রতারিত হওয়া কোনো গ্রাহক টাকা ফেরত চাইলে অ্যাডভোকেট মোজাম্মেলের মাধ্যমে মামলা মোকাদ্দমার হুমকি দিতেন। আরিফ হাসান রনি যেসব ভুয়া প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন সৈয়দ আক্তার হোসেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড, রুনা অ্যান্ড হাসান অ্যাসোসিয়েটস, এসএ হাসান কনসালটেন্সি এবং এসএস হাসান টুরিষ্ট ট্রাভেলস অ্যান্ড এডুকেশন কনসালটেন্সি।