বাঁশের চেয়ে কঞ্চি শক্ত, আনসার বিল প্রসঙ্গে সংসদে ফখরুল ইমাম
জাতীয় সংসদে আজ সোমবার (২৪ অক্টোবর) আনসার ব্যাটালিয়ন বিল-২০২৩ শীর্ষক বিল উত্থাপন হয়েছে। উত্থাপিত বিলটি নিয়ে সমালোচনা করেছেন সংসদের প্রধান বিরোধীদলের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম। তিনি বলেছেন, ‘আমরা অনেক সময় বলি, বাঁশের চেয়ে কঞ্চি শক্ত হয়ে গেছে। এখন পুলিশের যে কাজ তা যদি আমি ডিভাইড (বিভক্ত করা) করি, আমি প্যারালাল করি, তাহলে আমার কাজটা তো আমি করতে পারবো না। আমরা আনসার বাহিনীকে সমস্ত বাহিনীর সহায়তাকারী হিসেবে গঠন করেছি। কিন্তু, নতুন আইন অনুযায়ী, যদি তাদের পুলিশ বাহিনীর সমান করা হয় সেটি ভাল হবে না।’
আনসার ব্যাটালিয়ন বিল-২০২৩ শীর্ষক বিল উত্থাপনের পর আজ ফখরুল ইমাম এসব কথা বলেন। বিলটির সমালোচনা করা এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘১৯৭২ সালের সংবিধানে আইনশৃঙ্খলা ও শৃঙ্খলা বাহিনীকে যে অর্থে ব্যাখা করা হয়েছে তাই শৃঙ্খলা বাহিনী। আর ১৯৯৫ সালে ৪নং আইন অনুযায়ী আনসার বাহিনী গঠিত হয়েছে পুলিশের সহায়তাকারী হিসেবে।’
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘আমাদের দেশের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী আলাদা কাজ আছে। আমরা এলিট ফোর্স গঠন করে র্যাব গঠন করেছি, সেটারও আলাদা কাজ আছে। আমরা আনসার বাহিনীকে করেছি সমস্ত বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য। কীসের সহায়তা করার জন্য? সমস্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তারা সহায়তা করবে। এখন দেখা গেল, প্রস্তাবিত বিলের দুটি (৭ ও ৮) ধারায় তাদের পুলিশের সমকক্ষ করা হলো। ৭ ধারায় পুলিশ যে সমস্ত কাজ করবে একই কাজ আনসার বাহিনী করতে পারবে।’
উদহারণ টেনে এই আইন প্রণেতা বলেন, ‘এক নম্বর জননিরাপত্তামূলক কোনো কাজ, যা সরকার বা সরকারের চাহিদা অনুযায়ী সম্পন্ন করবে, সরকারের নির্দেশে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা বিষয়ে নিরাপত্তা প্রদান, মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় সহায়তা প্রদান। সরকারি নির্দেশ অনুয়ায়ী, সরকারি বাহিনীকে সহায়তা প্রদান করা। এ সমস্ত সকল কাজই পুলিশ করে থাকে। কিন্তু, ৮ নম্বর ধারায় আনসার বাহিনীর সদস্যকে দায়িত্বরত কর্মকর্তার নির্দেশে গ্রেপ্তার, দেহ তল্লাশি, মালামাল জব্দ করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এ ক্ষমতা কেন দেওয়া হলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে পুলিশ আছে। পুলিশের যে ক্ষমতা সেটা আনাসার বাহিনীকে দেওয়া হলো। এতে করে পুলিশের প্যারালাল (সমকক্ষ) ফোর্স বাহিনী হয়ে গেল।’
ফখরুল ইমাম বলেন, ‘বিজিবির সরাসরি কোনো অফিসার না থাকায় নেতৃত্ব দিয়েছিল সেনাবাহিনী। অর্থাৎ, সেনাবাহিনীর সহায়ক হিসেবে ছিল বিজিবি। কিন্তু, পরক্ষণে সেটার পরিণতি আমরা সবাই দেখলাম। তাই আমি বলব, আনসার বাহিনীকে সহায়ক বাহিনী হিসেবে রাখা যেতে পারে, সমকক্ষ ক্ষমতা দেওয়া যাবে না। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করব এ বিলটা বাতিল করা হোক।’
জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘আমাদের কোনো ইচ্ছে নেই পুলিশের সমকক্ষ বাহিনী করার। কিন্তু, আনাসার বাহিনী নির্বাচন, যানজট নিরসন, বিভিন্ন দুর্যোগের সময় কাজ করেছে। এ ছাড়া তাদেরকে একটি আইনের আওতায় আনার জন্য এ বিলটি করা হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের চাহিদা অনুযায়ী পুলিশের ফোর্স কম। এ কারণে বিলটা করা হচ্ছে। তবে, সংযোজন-বিয়োজন করবে এ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। পরে তিন কার্যদিবসে স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদন প্রদানের জন্য বিলটি পাশ করা হবে।’