প্রেমিকের সামনেই আত্মহত্যা করেন হোমায়রা হিমু : র্যাব
অনলাইনে জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে প্রেমিক মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন উরফির সঙ্গে হয়েছিল বাগবিতণ্ডা। এ সময় আত্মহত্যার করবেন বলে জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী হোমায়রা নুসরাত হিমু। কিন্তু পাত্তা দেননি উরফি। এমনকি, যে সময় হিমু আত্মহত্যা করেন, সে সময় তিনি তার খাটেই বসেছিলেন। কারণ, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলেন হিমু।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) হিমুর আত্মহত্যার পর আজ গ্রেপ্তার হন তার প্রেমিক উরফি। এরপর সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উরফির বরাত দিয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
খন্দকার আল মঈন বলেন, হিমু যখন আত্মহত্যা করেন, তখন উরফি তার খাটেই বসেছিলেন। কারণ, এর আগেও হিমু আত্মহত্যা করতে গিয়ে করেননি। ফিরে এসেছিলেন। সেজন্য, উরফি এবারও ভেবেছিলেন, হিমু আত্মহত্যা করবেন না। কিন্তু, হিমু যখন রশি গলায় ঝুলান, তখন আর তাকে রক্ষা করতে পারেননি উরফি।
র্যাব জানিয়েছে, রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় অভিনেত্রী হুমায়রা নুসরাত হিমুর আত্মহত্যার ঘটনায় তার ‘প্রেমিক’ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উরফি জিয়া নামেও পরিচিত।
খন্দকার আল মঈন বলেন, এ ঘটনায় হিমুর খালা বাদী হয়ে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় উরফিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মঈন জানান, ২০১৪ সালে হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে জিয়াউদ্দিনের বিয়ে হয়েছিল এবং কিছুদিনের মধ্যে পারিবারিক সমস্যাজনিত কারণে তাদের বিচ্ছেদ হয়। পারিবারিক আত্মীয়ের সম্পর্কের সুবাধে জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে হিমুর পরিচয় হয়। হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে জিয়াউদ্দিনের বিচ্ছেদ হলেও হিমু ও জিয়াউদ্দিনের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
খন্দকার আল মঈন বলেন, চার মাস আগে হিমু ও উরফি ঘনিষ্ট সম্পর্কে জড়ান। একপর্যায়ে জিয়াউদ্দিন হিমুকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়মিত তার বাসায় যাতায়াত শুরু করে।
মঈন আরও জানান, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হিমু ও উরফির মধ্যে ঝগড়া ও বাগবিতণ্ডা হতো। এ ছাড়া গত দুই থেকে তিন বছর ধরে হিমু অনলাইনে জুয়ায় আসক্ত হয়ে বিপুল অর্থ অপচয় করেছে বলে জিয়াউদ্দিন জানিয়েছেন।
জিয়াউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাব জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় জিয়া হিমুর উত্তরার বাসায় যান। পরে অনলাইন জুয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হিমু ও জিয়াউদ্দিনের মধ্যে বাগবিতণ্ডার একপর্যায় হিমু ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে একটি মই এনে সিলিং ফ্যানে আগে থেকেই বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে বলে জানান। পরে গলায় রশি দিলে উরফি হিমুকে নামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ সময় সে পাশের রুমে থাকা হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনেন। মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বটি এনে রশি কেটে তাকে নিচে নামানো হয়। পরে জিয়াউদ্দিন বাসার দারোয়ান এবং মিহিরের সহায়তায় হিমুকে বাসা থেকে রাজধানীর উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হিমুকে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করার পরে উরফি হিমুর ব্যবহৃত দুটি আইফোন ও গাড়ি নিয়ে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করেন। পরে হিমুর গাড়িটি উত্তরার বাসার পার্কিংয়ে রেখে দেন তিনি। এরপর মোবাইল ফোন দুটি বিক্রির উদ্দেশ্যে রাজধানীর বংশাল এলাকায় পালিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।