মাকে হত্যার দায়ে মেয়েসহ দুজনের যাবজ্জীবন ও দুজনের ফাঁসি
মানিকগঞ্জের চাঞ্চল্যকর মাহমুদা আক্তার (৪৫) হত্যা মামলায় দুজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় নিহতের মেয়েসহ দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও একজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক জয়শ্রী সমদ্দার আজ বুধবার (৮ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, কেরাণীগঞ্জ জিন্দাপীড় এলাকার মো. রাকিব হোসেন ও নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার পূর্ব গোলমন্ডা এলাকার মো. মাহফুজুর রহমান। যাবজ্জীবনপ্রাপ্তরা হলেন, জিন্দাপীড় এলাকার মো. শফিউর রহমান নাঈম ও নিহত মাহমুদার মেয়ে জ্যোতি। রায়ের সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি ভোর সাড়ে ৬টার দিকে মাহমুদার স্বামী জহিরুল ইসলাম হাঁটতে ও বাজার করতে বাড়ি থেকে বের হন। সকাল পৌনে ৮টার দিকে তিনি বাসায় ফেরেন। এ সময় মেয়ে জ্যোতি বাড়ির গেট খুলে দেন। এরপর মেয়েকে তার মায়ের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, মা নাস্তা তৈরি করছে বলে জানায় জ্যোতি।
এরপর বাড়ির পঞ্চমতলায় রাখা কবুতরকে খাবার দিতে যান জহিরুল। সেখান থেকে ফিরে রুমের সামনে জ্যোতিকে কান্না করতে দেখে কান্নার কারণ জানতে চান তিনি। এ সময় জ্যোতি এলোমেলো কথাবার্তা বললে ঘুমানোর কক্ষে গিয়ে স্ত্রী মাহমুদাকে লেপ দিয়ে ডাকা অবস্থায় দেখতে পান তিনি। স্ত্রীকে ডেকে সাড়া না পাওয়ায় লেপ ধরে টান দেন তিনি। এ সশয় মাহমুদার জিহ্বা বের করা ও নাকে রক্ত দেখতে পান জহিরুল।
এ সময় চিৎকার দেন স্বামী জহিরুল। তার চিৎকারে আশেপাশের রুমের লোকেরা এসে মাহমুদাকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে নেয়। সেখানে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে মেয়েসহ মোট পাঁচজনকে আসামি করে মানিকগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেন জহিরুল। ২০২০ সালের ৩১ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মানিকগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আল মামুন আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২৫ জনের মধ্যে ২১ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক জয়শ্রী সমদ্দার এই রায় দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদনে জানান, জ্যোতি জেদী ও বেপরোয়া। ঘটনার প্রায় তিন মাস আগে ঢাকার ধামরাই উপজেলার গোলাকান্দা গ্রামের মারুফের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের দুবছর পর কেরাণীগঞ্জের নাঈমের সঙ্গে ফেসবুকে তার প্রেম হয়। একপর্যায়ে তারা শারীরিক সর্ম্পকে জড়ায়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হলে জ্যোতি মানিকগঞ্জে বাবার বাড়ি চলে আসে।
এরপর থেকে নাঈম মাঝেমধ্যেই জ্যোতির সঙ্গে দেখা করতে তাদের বাড়িতে যেত। সবার অগোচরে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতো তারা।বিষয়টি জ্যোতির মা বুঝতে পারে এবং মেয়েকে শাসন করে দ্রুত অনত্র বিয়ে দেওয়ার জন মনস্থির করে। এ নিয়ে নাঈমের সহায়তা নিয়ে তার মাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে জ্যোতি।
সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রেমিক নাঈম আসামিদের সঙ্গে এক লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে মাহমুদাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ঘটনার আগেরদিন বিকেলে জ্যোতির কক্ষে গিয়ে অবস্থান করে নাঈমসহ মোট চারজন। ঘটনার দিন সকালে জহিরুল বাড়ি থেকে বের হলে মা মাহমুদার কক্ষে জ্যোতিসহ আসামিরা যায়।
মেয়ের সঙ্গে অপরিচিত লোকদের দেখে তিনি চিৎকার করার চেষ্টা করে। এ সময় মাহমুদাকে আসামিরা ধরে শ্বাসরোধ করে খুন করে। মরদেহটি বিছানায় রেখে লেপ দিয়ে ঢেকে কৌশলে পালিয়ে যায় আসামিরা।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর আইনজীবী আবদুস সালাম বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।’ তবে, রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছে আসামিদের আইনজীবীরা।