চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার বিচার ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আজ সোমবার (১৩ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন। এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ ছয় মাসের মধ্যে মামলাটির বিচার শেষ করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এদিকে আজ মামলার আসামি আশীষ রায় চৌধুরীর জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। এর ফলে আশীষ রায় চৌধুরীর জামিন বহাল রইল। গত ২৯ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের লিস্টে আসে। সেদিন আসামিপক্ষের আইনজীবী জানান, ছয় মাস সময় ১১ অক্টোবর শেষ হয়েছে। আপিল বিভাগের আদেশ বাস্তবায়িত হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে ৬ ফেব্রুয়ারি দেওয়া আদেশ অনুসারে উল্লেখিত (ছয় মাস) সময়ের মধ্যে মামলাটির বিচার কেন শেষ হয়নি, তার কারণ এক সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিচারককে জানাতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে আশীষ রায়কে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানির জন্য ১২ নভেম্বর তারিখ রাখা হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে।
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে বিচারকের প্রতিবেদন আপিল বিভাগে উপস্থাপন করা হয়। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক এম আলী আহমেদ প্রতিবেদনে বিলম্বের ছয়টি কারণ উল্লেখ করেছেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। আসামিপক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী পলাশ চন্দ্র রায়, সেলিম আশরাফ চৌধুরী ও এম হারুনুর রশীদ খান।
গত ১০ জানুয়ারি এই মামলায় আসামি আশীষ রায় চৌধুরীকে হাইকোর্ট জামিন দেন। এই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার আদালতে আবেদন করে। ১৬ জানুয়ারি চেম্বার আদালত আশীষ রায়ের জামিন স্থগিত করে নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। ৬ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ ছয় মাসের মধ্যে বিচার শেষ করতে নির্দেশ দেন। এই সময় পর্যন্ত আসামি আশীষ রায়ের জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি মুলতবি (স্ট্যান্ড ওভার) রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় শুনানি নিয়ে আজ আদেশ দেওয়া হয়।
১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে নায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনার দিনই নিহত সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় আদনান সিদ্দিকীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারি আসামি আদনান সিদ্দিকীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আশীষ কুমার রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, ফারুক আব্বাসী ও সানজিদুল ইসলাম ইমনকে আসামি করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে বলেন, ‘বনানী জামে মসজিদের পাশে আবেদীন টাওয়ার। সেই টাওয়ারের অষ্টম তলায় ‘সুপার ট্রাম্পস ক্লাব’। এই ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশীষ কুমার রায় চৌধুরী। সেই ক্লাবে আসামাজিক কার্যকলাপ, নাচ গান, মদ্য পান ও নারীদের অশ্লীল নৃত্য হতো এবং সেখানে আপত্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হতো।’ তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সোহেল চৌধুরী ট্রাম্পস ক্লাবে এমন আপত্তিকর পরিবেশ বন্ধ করার জন্য মসজিদ কমিটির লোকজন নিয়ে যান। তিনি সেখানে ক্লাব বন্ধ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হন।
পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই সেই ক্লাবে বান্ধবীকে নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ে সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর গোলমাল হয়। সোহেল চৌধুরী আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গালি দেয়। পরে সোহেল চৌধুরীর বন্ধু কালা নাসির আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গুলি করতে গেলে তিনি বাথরুমে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন।’
তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে বলেন, ‘মেজর (অব.) হাফিজ তাদের অনুরোধ করে সোহেল চৌধুরীকে নামিয়ে দেন। পরে বিভিন্ন সময় বান্টি ইসলাম ও আশীষ কুমার রায় চৌধুরীর সঙ্গে ট্রাম্পস ক্লাবে সোহেল চৌধুরীর বাগবিতণ্ডা হয়। সোহেল চৌধুরীর কারণে ট্রাম্পস ক্লাবের কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। তারা তখন সোহেল চৌধুরীকে ভয়ভীতি দেখান। ঘটনার দিন সোহেল চৌধুরী বনানীর সেই ট্রাম্পস ক্লাবে যেতে চান। তখন তাকে প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আবার রাত ৩টায় ট্রাম্পস ক্লাবের সম্মুখে এলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামিরা পেশাদার খুনি দিয়ে গুলি করে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করে বলে প্রমাণ হয়েছে।’