মির্জা ফখরুলের জামিন নামঞ্জুর
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরের মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বুধবার (২২ নভেম্বর) বিকেল ৩টা ১০ মিনিটের দিকে এ আদেশ দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সাল বিন আতিক।
বেলা ২টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়ে বেলা ৩টা ১০ মিনিটে শুনানি শেষে বিচারক জামিন নাকচ করেন।
জামিন শুনানির শুরুতে বিএনপির আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, হুজুর আদালত, মির্জা ফখরুল বিএনপির মহাসচিব। তিনি সাবেক মন্ত্রী ও এমপি ছিলেন। তিনি অত্যন্ত সুপরিচিত ও সম্মানীত লোক। বিএনপির বিরুদ্ধে যারা রাজনীতি করেন, তারাও মির্জা ফখরুলকে পছন্দ করেন ও ভালো জানেন।
এ আইনজীবী আরও বলেন, মির্জা ফখরুল গুরুতর অসুস্থ। তার ঘাড়ের রগে ব্লক রয়েছে। তাঁকে দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা অনুসারে জামিন দেওয়া যাতে পারে।
জামিন শুনানিতে তিনি আরও বলেন, মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে মামলায় যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কোনটা সত্য নয়। এছাড়া ২৮ অক্টোবরের ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও মির্জা ফখরুলকে দেখা যায়নি। এমনকি এজাহারকারি ৭০-৮০ জন, যাদের আসামি করা হয়েছে, কারও বিরুদ্ধে সুর্দিষ্টি অভিযোগ নেই।
মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার আরও বলেন, মামলায় জব্দ তালিকায় যাদের সাক্ষী করা হয়েছে, তারা কেউ ভুক্তভোগী নয়। এমনকি জব্দ তালিকার সাক্ষীগুলো ভাসমান। গাড়ির ড্রাইভার, হেলপার বাদী হয়ে মামলা করেনি। পুলিশ এখানে মামলা করেছে, তাই মির্জা ফখরুলের জামিন দেন। জামিন দিলে তিনি পলাতক হবে না। এটা সিউর করছি, পূর্বে মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে, তিনি সব মামলায় হাজিরা দিয়েছেন।
এ সময় বিএনপির আইনজীবী আসাদুজ্জামান, বদরুজ্জদা বাদল জামিন চেয়ে শুনানি করেন।
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আল আবু শুনানিতে বলেন, মির্জা ফখরুলের ঘটনাস্থলে থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই। মির্জা ফখরুলের উসকানিতে এ ঘটনা ঘটেছে। তার নির্দেশে অনেক আসামিরা হাসপাতালে ভাঙচুর করেছে, যা জঘন্য কাজ। যেহেতু মামলা তদন্ত চলছে, তাই আসামির জামিন নাকচের আবেদন করছি।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি তাপস কুমার পাল জানান, গত সোমবার (২০ নভেম্বর) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সাল বিন আতিকের আদালতে জামিন শুনানির দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু জামিন শুনানির শুরুতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু অসুস্থ থাকায় শুনানি পেছানোর আবেদন করা হয়। পরবর্তীতে বিচারক সে আবেদন মঞ্জুর করে বুধবার (২২ নভেম্বর) শুনানির দিন নির্ধারণ করেন।
এর আগে গত ২৯ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মির্জা ফখরুলের গুলশানের বাসা থেকে তাকে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরদিন জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সে জামিন নাকচ আবেদনের বিরুদ্ধে মির্জা ফখরুল তার আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদিন মেজবাহের মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতাকর্মীরা হাতে লাঠিসোটা, ইট পাটকেল ও ককটেলসহ বিভিন্ন মারাত্মক অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রধান বিচারপতির বাস ভবনের সামনে বেআইনি সমাবেশ ঘটিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয় ও মিছিল করতে থাকে। ওই সময় তারা বৈশাখী পরিবহণের বাসসহ একাধিক বাস, পিকআপ ভাঙচুর করে আনুমানিক ২০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। মিছিলকারীরা বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ স্থানীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশে জনমনে আতঙ্ক, ত্রাস সৃষ্টি করে পুলিশের কর্তব্য পালনে বাধা ও হত্যার উদ্দেশে আক্রমণ করে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুলিশ সদস্যদের আহত করে।