সারা দেশে বিএনপি ও সমমনাদের হরতাল শুরু
তফসিল বাতিল ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা হরতাল কর্মসূচি আজ বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে। এ হরতাল শেষ হবে আজ সন্ধ্যা ৬টায়।
গতকাল বুধবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ হরতাল কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান।
রিজভী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো দুর্জয় গতিতে জীবন বাজি রেখে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। বৃহস্পতিবারও নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে, সর্বান্তকরণে সার্বিকভাবে সর্বাত্মক এই হরতাল কর্মসূচি পালন করবে।’
হরতাল পালনে দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর চলমান কর্মসূচি সংলাপহীন সত্যের অবমাননার প্রতিবাদে, সমাজে দুর্বিনীত বর্গীরাই এখন পরম অতিথি… এদের বিরুদ্ধে এবং পদলেহীদের দেশ নিলামের প্রতিবাদে, জমাটবাঁধা কান্নার পাহাড় থামাতে, বিভেদের বিভীষিকা দূরীভুত করতে, চোখ বাঁধা মানুষের দীর্ঘ সারি প্রসারিত করতে না দিয়ে শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে, আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ এবং বিএনপি মহাসচিবসহ সকল নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে এই হরতাল কর্মসূচি সফল করতে সকলে এগিয়ে আসুন।’
রিজভী আরও বলেন, ‘দেশে চলছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে মাতম আর মর্সিয়া। কান্না-আহজারির প্রতিদিনের ঘটনার বর্ণনা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা এক কঠিন সময় পার করছে…অনেকটা দেশ ছাড়া উদ্বাস্তুর মতো…সহায় সম্বলহীন নিঃস্ব তারা। বিএনপির নেতাকর্মীদের যেন মানবাধিকার থাকতে নেই। সংবিধানে যতটুকু মানবাধিকার আছে সেই অধিকার প্রয়োগেরও অধিকার নেই তাদের। হত্যা, লুণ্ঠন ও বন্দি হওয়াই যেন তাদের ভাগ্যের লিখন। রাষ্ট্র বলতেই এখন শুধু শেখ হাসিনা আর আওয়ামী লীগের। শেখ হাসিনার নীতিই যেন… হয় আমাকে সমর্থন করো না হলে নিশ্চুপ থাক। আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর উগ্র প্রচারের বিরুদ্ধে টু-শব্দ করতে পারবে না। লুণ্ঠন আর হত্যা যেন কোন অমানবিক কাজ নয় ক্ষমতাসীনদের কাছে। শেখ হাসিনা লেলিয়ে দিয়েছেন তার পেটোয়া বাহিনীকে যারা মনে করে লুটপাট, সহিংসতা ও হত্যা যেন তাদের দলীয় কর্তব্য। তার (শেখ হাসিনা) তর্কাতীত ক্ষমতা ভোগ করার মনোভাব থেকে জন্ম নিয়েছে দুঃশাসনের বর্বর উপাদান।’
গত মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) হাতিরঝিলের বাসা থেকে বের হওয়ার পর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের ওপর ছাত্রলীগের হামলা এবং পুলিশের গ্রেপ্তারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।
রিজভী আরও বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৩৬৫ জনের অধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার এবং ১৪টি মামলায় এক হাজার ৫৩০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।’
নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত তফসিলে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন আজ বৃহস্পতিবার বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে।
এর আগে ২৮ নভেম্বর মহাসমাবেশে বাধা ও নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে বিএনপি। গত ৩১ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে প্রথম দফায় সারা দেশে তিন দিনের সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ শুরু করে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি বিরোধী দল। তিন দিনের অবরোধের শেষ দিন ২ নভেম্বর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ফের অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। সে ঘোষণা অনুযায়ী, ৫ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ শুরু হয়। এরপর তৃতীয় দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ৮ নভেম্বর শুরু হয়ে ১০ নভেম্বর সকাল ৬টায় শেষ হয়। এরপর চতুর্থ দফার অবরোধ শুরু হয় ১২ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে, যা শেষ হয় মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকাল ৬টায়। পরে ১৫ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে পঞ্চম দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করে দলটি। এরপর নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর ডাকা টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের কর্মসূচি শেষ হয় মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সকাল ৬টায়। পরদিন বুধবার (২২ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে ষষ্ঠ দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ পালন করে দলটি। শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ৬টায় শেষ হয় এই অবরোধ কর্মসূচি। আর রোববার (২৬ নভেম্বর) সকাল ৬টায় সপ্তম দফার অবরোধ শুরু হয়, যা শেষ হয় মঙ্গলবার। গতকাল বুধবার (২৯ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে থেকে শুরু হয় অষ্টম দফার অবরোধ, যা শেষ হয় আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায়।