চারণকবি বিজয় সরকারের প্রয়াণ দিবস পালিত
নানা আয়োজনে একুশে পদকপ্রাপ্ত উপমহাদেশের প্রখ্যাত চারণকবি বিজয় সরকারের ৩৮তম প্রয়াণ দিবস পালিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (৪ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী নড়াইল শিল্পকলা একাডেমি মিলানায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ উপলক্ষে উন্মুক্ত বিজয়গীতি পরিবেশন, কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালন, কবির আত্মার শান্তি কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন, আলোচনাসভা ও বিজয়গীতির আসর বসে।
চারণকবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশন আয়োজিত আলোচনা সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাশ্বতীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ আশফাকুল হক চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান, জেলা কালচারাল অফিসার মোহাম্মাদ হামিদুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রওশন আলী, চারণকরি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম আকরাম শহীদ চুন্নু।
চারণকবি বিজয় সরকার ১৯৮৫ সালের এই দিনে পরলোকগমন করেন। কবির মৃত্যুর পর আলোর নিচে পড়ে তার বসতভিটা। যুগ খানেক আগে তাঁর বসতভিটায় ছোট্ট পরিসরে ‘বিজয় মঞ্চ’ নির্মিত হলেও তাঁর স্মৃতিধন্য তেমন কিছুই নেই এখানে। দেখভালের কেউ না থাকায় অযত্ন-অবহেলায় রয়েছে সাধকের বসতভিটাসহ তাঁর স্মৃতির জন্য নির্মিত বিজয় মঞ্চ। এখনও স্থাপন করা যায়নি পানীয় জলের টিউবওয়েল। আর আগন্তুকদের জন্য নেই স্ব্যাস্থ্য সম্মত টয়লেট ব্যবস্থাও। শুধু তাঁর জন্ম ও প্রয়াণ দিবসে তাঁকে স্মরণ করা হয়।
বিজয় ভক্তদের দাবি, বিজয় সরকারের স্মৃতিকে ধরে রাখতে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। তবে তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের আশ্বাস দিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী।
সদর উপজেলার নিভৃতপল্লী ডুমদি গ্রামে ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন গানের পাখি, সুরের পাখি কবিয়াল বিজয় সরকার। কবির প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সংগীত ও অসাধারণ গায়কী ঢঙের জন্য ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেছিলেন ভক্ত আর দর্শকদের কাছ থেকে। ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে কবে থেকে তাঁর অনুরাগীদের কাছে সরকার হয়ে উঠলেন তার ঠিক হিসাব কেউ বলতে পারে না। প্রেম, দ্রোহ ও বিচ্ছেদ দেশের আর মুক্তির গানসহ লিখেছেন প্রায় দুই সহস্র গীতিকাব্য। শিল্পকলায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি।
তবে, শিল্পীর মৃত্যুর ৩৮ বছরেও এখানে গড়ে ওঠেনি কোনো স্মৃতি সংগ্রহশালা। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে তাঁর বসতভিটা, তা নিয়ে আক্ষেপ স্বজন আর ভক্তদের।
নড়াইলে তথা দেশ-বিদেশে বিজয় সরকারের গান আজও তুমুল জনপ্রিয় হলেও সরকারিভাবে সেসব গান সংরক্ষণের তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
বিজয়ভক্তদের দাবি, গণমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে বিজয় সরকারের গানের মর্মকথা তুলে ধরা হোক। রচনা করা হোক গানের স্বরলিপিসহ বিজয় সরকারের জীবনীভিত্তিক বই।
কবির উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে’- ‘তুমি জানো নারে প্রিয়, তুমি মোর জীবনের সাধনা’-‘পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী একদিন ভাবি নাই মনে’