ভুল পদক্ষেপে নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা না পায় : রাষ্ট্রপতি
ভুল পদক্ষেপে যেন কোন নিরাপরাধ ব্যক্তির ক্ষতি বা সাজা না হয়, সেদিকে দুদককে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
আজ শনিবার (৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০২৩ উপলক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
দুর্নীতিবাজের পরিচয় কেবলই দুর্নীতিবাজ মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, দুর্নীতিবাজদের আর কোনো পরিচয় নেই। তাদের প্রতিরোধে সামাজিকভাবে দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব তৈরিতে কাজ করতে হবে।
দুদকের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা আছে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির নামে মিথ্যাচার করেছিল একটি পক্ষ। সে সময় দুদকের কেউ কেউ দেশকে হেয় করার চেষ্টা করছিলেন। তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আমরা তার জবাব দিয়েছি। সে সময়ের দেশকে হেয় করার জড়িতরা এখনও দুদকে সক্রিয় আছে।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ক্ষুধা, দুর্নীতিমুক্ত এবং সুখী-সমৃদ্ধ একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, কালোবাজারি ও অর্থপাচারের বিরুদ্ধে জাতির পিতা সবসময় অত্যন্ত সোচ্চার ছিলেন। ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন- “৭১-এ আমি ঘোষণা করেছিলাম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। আজ ৭৫ সনে আমি আহ্বান জানাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক চক্রের হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতাসহ তাঁর পরিবারের আপনজনদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ফলে আবার রুদ্ধ হয় উন্নয়নের সে অগ্রযাত্রা। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথ বঙ্গবন্ধু দেখিয়ে গেছেন, নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আবারও সেই পথ ধরে এগিয়ে চলছে দেশ। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থ-সামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বেড়েছে মাথাপিছু আয় ও গড় আয়ুষ্কাল। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। নির্মিত হয়েছে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। বাস্তবায়িত হয়েছে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, কর্ণফুলী বহুমুখী টানেল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো মেগাপ্রকল্প।”
মো. সাহাবুদ্দিন আরও বলেন, “মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আজ অভিজাত স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য। টেকসই উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি উন্নত, স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। তবে, দুর্নীতি সেই কাঙ্খিত উন্নয়নের সবচেয়ে বড় বাধা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা আরও গতি পাবে।”
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য হলো মানবিক, বৈষম্যহীন, দারিদ্র্যমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ। আমাদের পবিত্র সংবিধানও দুর্নীতিকে নিষেধ করেছে। সংবিধানের এই মর্মকে ধারণ করেই দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন। বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন। ১৯৫৬ সালের কোয়ালিশন সরকারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় ও আপসহীন অবস্থানের জন্যই তাঁকে দুর্নীতি দমন বিষয়ক মন্ত্রী করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কখনো দুর্নীতির সাথে আপস করেননি। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বারবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। ২১ জুলাই ১৯৭৫ সালে বঙ্গভবনে নবনিযুক্ত জেলা গভর্নরদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘শুধু নিজেরা ঘুষ খাওয়া করাপশন নয়। এ সম্বন্ধে আমার কথা হলো-করাপ্ট পিপলকে সাহায্য করাও করাপশন।’
দুর্নীতিবাজকে সাহায্য করা, স্বজনপ্রীতিও দুর্নীতি জানিয়ে অনুষ্ঠানের সভাপতি দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হলেও দুর্নীতি বেড়েছে। এতে প্রমাণ হয় শুধু অভাবের কারণেই নয়, লোভের কারণেও দুর্নীতি হচ্ছে। দুদক পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে। কেবল সেবার বিনিময়ে ঘুষ নেওয়াই দুর্নীতি নয়, দায়িত্ব পালন না করাও দুর্নীতি।
দুদক কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক বলেন, দেশ থেকে নানা উপায়ে অর্থ পাচার হচ্ছে। শিক্ষিত ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা দেশের টাকা পাচার করছে। ওভার ইনভয়েচিং আন্ডারভয়েচিং করে অর্থ পাচার হচ্ছে।
দুর্নীতি নির্মূলে সবাইকে এক সাথে কাজ করতে হবে জানিয়ে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) আছিয়া খাতুন বলেন, সামাজিকভাবে দুর্নীতি বিষয় জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা না গেলে, কেবল দুদকের পক্ষে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।
এর আগে সকালে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি উদ্বোধন করেন। জাতিসংঘ ২০০৩ সালে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ঘোষণা করে। সে হিসেবে এবার ২১তম আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে “উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ।”
বরাবরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আটটি বিভাগ, ৬৪টি জেলা ও ৪৯৫টি উপজেলায় বড় পরিসরে উদযাপন করা হয় আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। একই সঙ্গে দেশে সকল সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ, সরকারি-আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং পিকেএসএফসহ অন্যান্য এনজিওতে দুর্নীতি বিরোধী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।