শেষের দিকে ঢাবি ছাত্রলীগ কমিটির মেয়াদ, হতাশায় পদপ্রত্যাশীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ মাজহারুল কবির শয়নকে সভাপতি ও তানভীর হাসান সৈকতকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণার বছরপূর্তি আগামী ২০ ডিসেম্বর। গত বছর তাদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ কমিটি কারার কথা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। এনিয়ে হতাশ নেতাকর্মীরা, উঠেছে নানা প্রশ্ন, পদ-প্রত্যাশীদের মধ্যে জন্ম নিয়েছে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ। যদিও জাতীয় নির্বাচনের পরে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার আভাস দিয়েছেন ঢাবি ছাত্রলীগের ক্ষমতাসীন দুই নেতা।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখা সাংগঠনিক জেলার মর্যাদা পায়। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১০ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘জেলা শাখার কার্যকাল এক বছর’। সেই হিসেবে চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বর শেষ হবে শয়ন-সৈকতের নেতৃত্বে বর্তমান কমিটির মেয়াদ। মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র কয়েক দিন বাকি।
জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসে ওবায়দুল কাদের ঢাবি ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য মৌখিক নির্দেশনা দেন। ওই সময় পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের কাছে জীবন বৃত্তান্ত আহ্বান করে সেগুলো জমা নেয় ঢাবি ছাত্রলীগ। এ ছাড়া, গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৬ দিনের সরকারি সফর শেষে দেশে ফিরলেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কথা বলেছিলেন ঢাবি ছাত্রলীগের এই দুই নেতা। কিন্তু, এ উদ্যোগও শেষমেশ জমে আছে বরফে।
যদিও পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকের নামেই আছে নানা অভিযোগ। তবে, ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা বিতর্কিত কাউকে পদায়ন করব না। তবে, যদি কেউ নিজেকে শুধরে নেয়, সেটা অন্য হিসাব। বিগত এক বছরে যার খারাপ কিছু পাওয়া যায়নি বা ভবিষ্যতে এই ধরনের কাজে জড়িত হবে না, এমন কিছু ব্যক্তিকে বিবেচনা করা যেতে পারে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী ও পদপ্রত্যাশী একজন কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘কমিটি না হওয়ার পেছনে শাখার দুই নেতার ব্যর্থতা দায়ী বলে মনেকরি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কমিটি না হওয়াতে কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের বিপরীতে হতাশা বিরাজ করছে। আমার নিজের ক্ষেত্রেও তাই।’
মাজহারুল কবির শয়নের এক অনুসারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনের জন্য লোকজনকে অ্যাক্টিভ রাখতেই এমন করা হচ্ছে বলে আমার মনে হয়। তবে, এর আগেও শোনা গিয়েছিল, কয়েকবার কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়ে যাচ্ছে। তবে, আজ পর্যন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক। আমাদের অনেকেরই মাস্টার্স শেষ, এই মুহূর্তে চাকরির প্রিপারেশন বা ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন। কিন্তু, রাজনীতিতে অ্যাক্টিভ থেকে ওদিকেও পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে পারছি না, আবার এদিকে কমিটিও হচ্ছে না।’ তিনি দোটানায় আছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘পদ-পদবি তো সবাই পাবে না, তাহলে সবাইকে কেন দোটানায় রাখতে হবে? এগুলো তাদের (ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) বিবেচনায় নেওয়া উচিত।’
পদপ্রত্যাশী আরেকজন বলেন, ‘সংগঠনে সময়ের কাজ সময়ে করা ও গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে কার্যক্রম পরিচালনার সংস্কৃতির চর্চা প্রয়োজন। এক বছরেও একটা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা সম্ভব হয়নি, এটা সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছার অভাব বলে মনে করি। এভাবে দেরি করে কমিটি দিলে তখন নামেমাত্র পদ পাওয়ার কয়েকদিন পরই আবার নতুন কমিটি ঘোষণা হয়ে যায়। তখন আর কাজ করার সুযোগ থাকে না।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সামনে আমাদের জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনে আমাদের নেতাকর্মীদের কন্ট্রিবিউশন দেখব। আমরা মনেকরি, এখনই যার যার জায়গা থেকে সুযোগ রয়েছে যে, এই সময়টাতে কাজ করে নিজেকে উন্মোচন করার। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা নির্বাচনের পরে আমাদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করছি। তবে, এটা আমাদের গঠনতান্ত্রিক কোনো বিষয় না।’
সাংগঠনিক স্বার্থে আমাদেরকে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয় জানিয়ে সৈকত বলেন, ‘সংগঠনের স্বার্থেই আমাদের অনেক সময় পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হয়। আর কমিটি আগেই রেডি করে ফেলেছিলাম, কিন্তু কৌশলগত কারণে জিনিসটা বন্ধ রাখা হয়েছে। আমাদের ব্যক্তিস্বার্থে তো এমন হচ্ছে না। তারপরও আমরা মানুষ, ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নই, আমাদেরও সীমাবদ্ধতা থাকে। আর আমার যতদূর জানা আছে, এর আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এক বছরের আগে হয়নি।’
সৈকত আরও বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে, নেতাকর্মীদের মধ্যে যে উত্তেজনা-উদ্দীপনা ছিল সেটা এখনও আছে এবং থাকবে। ইলেকশনের পর আমরা আমাদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করব।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে কোনো সমন্বয়হীনতা ইস্যু নেই জানিয়ে সৈকত বলেন, কেন্দ্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো। সবকিছুই তাদের সঙ্গে সমন্বয় ও পরামর্শ করেই করা হয়।’
ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, ‘কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনের পর উপযুক্ত সময়ে আমরা এটা করে ফেলব। আমরা এখন জাতীয় নির্বাচনকে পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের কমিটি অনেক আগে থেকেই প্রস্তুত রয়েছে এবং এটা যেকোনো সময় প্রকাশিত হবে।’
এক বছর পার হতে চললেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারাকে অনেকে ব্যর্থতা বলছে, সে বিষয়টি তুলে ধরে প্রশ্ন করা হলে শয়ন বলেন, ‘আমরা করতে পারিনি, বিষয়টি আসলে এমন নয়। আমরা এটা প্রকাশ করিনি। না পারার কোনো কিছু নেই। আজকে চাইলে, আমরা আজকেই কমিটি করতে পারি।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে ইতোমধ্যে দিকনির্দেশনা দিয়েছি। এ বিষয়ে তারাও কাজ করে যাচ্ছে। তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আশা করছি, খুব দ্রুতই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে।’
কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ‘সকল সাংগঠনিক ইউনিটকেই আমরা দ্রুত কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ দিয়েছি।’