‘গোলাপের আপত্তি’তে প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে নেই জেলার শীর্ষ নেতারা
মাদারীপুরের কালকিনিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে শনিবার বিকেলে দলীয় সভানেত্রী বক্তব্য দেন। দলীয় আয়োজনে সমাবেশ হলেও সেই জনসভায় উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ তো দূরের কথা, ছিলেন না জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ উল্লেখযোগ্য নেতারা। এমনকি উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যের কমিটি হলেও সভায় উপস্থিত ছিলেন মাত্র চার জন। এই ঘটনায় দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। জেলাজুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
জনসভায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও মাদারীপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের আপত্তির কারণে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে যাওয়া হয়নি বলে অভিযোগ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের।
মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা মাদারীপুরে স্বাগত জানাই। অনেক ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও তার জনসভায় আমরা যেতে পারিনি।’
মো. শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভার আগে কালকিনিতে একটি বর্ধিত সভা হয়। সেখানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম অংশগ্রহণ করেন। তিনি আমাদের কাছে নামের প্রস্তাব চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১১ জন নেতার নামের প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু গতকাল মির্জা আজম আমাদের জানিয়েছেন, আবদুস সোবহান গোলাপ চান না আমরা প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যাই। তাই আমাদের ডিউটি পাসও হয়নি। আমাদের প্রসঙ্গে তার আপত্তি কেন সেটা সেই ভালো জানেন। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি জনসভা উপলক্ষে গত সোমবার কালকিনি পৌরসভা মাঠে এক বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ ছাড়াও মাদারীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, মাদারীপুর-৩ আসনের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপসহ জেলার অনেক নেতাই উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভা মঞ্চে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ জেলার জ্যেষ্ঠ আরও কয়েকজন নেতার নাম রাখা হয়। কিন্তু তাদের বিষয়ে আবদুস সোবহান আপত্তি জানালে জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জেলা ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের কোন নেতারাই প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যাননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী জনসভায় থাকার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ নেতার নাম পাঠানো হয়। তারা হলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, সহসভাপতি সিরাজুল হক ফরাজি, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালিদ হোসেন ইয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক পাভেলুর রহমান খান, যুবলীগের সভাপতি আতাহার সরদার, সাধারণ সম্পাদক রুবেল খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মিরাজ হোসেন খান, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান, সাধারণ সম্পাদক বায়েজিদ হাওলাদার। নামের প্রস্তাব পাঠানো এই নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমকে সমর্থন করায় আবদুস সোবহান গোলাপ চান না তারা কেউ প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় থাকুক। তিনি (গোলাপ) বিরোধিতা করায় সবার যাওয়ার ইচ্ছে থাকার পরেও তা হয়নি।’
জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ ফরাজি বলেন, ‘স্থানীয় এমপি চান না আমরা প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যাই। তাই আমাদের যাওয়ার খুব ইচ্ছে থাকলেও সেটা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের খারাপ লাগলেও পরিস্থিতির কারণে আমরা মেনে নিয়েছি।’
কালকিনি, ডাসার ও সদরের পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসন। এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম। তিনি আবদুস সোবহানের বিপক্ষে নির্বাচনের অংশ নেওয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, আওলাদ হোসেন, ভবতোষ দত্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরদার মো. লোকমান হোসেন বাদে বাকি সবাই তাহমিনা বেগমকে সমর্থন দিয়েছেন। এ কারণে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনগুলোর জ্যেষ্ঠ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় থাকতে চাইলেও, তাদের জন্য ডিউটি পাসের ব্যবস্থা করেননি গোলাপ।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহীন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তা ছাড়া স্থানীয় এমপি গোলাপ চান না আমরা ওই অনুষ্ঠানে যাই। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমাকে একবার জানানো পর্যন্ত প্রয়োজন মনে করেননি তিনি (গোলাপ)। তাই আমাদের অঙ্গসংগঠনের সিনিয়র কেউ যায়নি।’
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে মাদারীপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ মুঠোফোনে বলেন, ‘তারা যে কথা বলেছেন, এটা সঠিক না।’