মৌলভীবাজারে চলছে ঐতিহ্যবাহী মাছমেলা
মৌলভীবাজার জেলার শেরপুর এলাকায় কুশিয়ারা নদীর পাড়ে শুরু হয়েছে পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। শনিবার (১৩ জানুয়ারি) রাত থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এই মেলা শেষ হবে আজ সোমবার দুপুরে।
প্রতি বছরই মাছপ্রেমিরা অপেক্ষায় থাকেন বছর ঘুরে কখন এ মাছের মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রায় দুইশ বছরের অধিক সময় ধরে চলে আসা এ মেলায় হাওর ও নদীতে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠা দেশীয় প্রজাতির টাটকা মাছ কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে আসে ক্রেতারা।
কয়েক জেলার মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন বছর ঘুরে কখন মাছের মেলা অনুষ্ঠিত হবে। তাই আগে থেকে প্রস্তুত থাকে ক্রেতা ও বিক্রেতারা। মৌলভীবাজার, সিলেট ও হবিগঞ্জের সীমানা ঘেঁষে জেলার শেরপুর এলাকায় বসে প্রতিবছর এ মাছের মেলা। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে মাছের মেলাটি শুরু হলেও এটি এখন সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।
মাছ বিক্রেতারা জানান, হাওর ও নদীতে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা মাছ সাধারণত তাঁরা নিয়ে আসেন এই মেলায়। মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাওর ও নদী থেকে মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
মাছ ব্যবসায়ী মহসীন আহমদ জানান, মেলায় ৮৫ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ কুশিয়ারা নদী থেকে ধরা হয়েছে। ওই মাছসহ আরও বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ মেলায় নিয়ে আসেন তিনি। সবচেয়ে বড় বাঘাইর মাছের মূল্য চাচ্ছেন এক লাখ ২৫ হাজার টাকা।
আরেক বিক্রেতা কবির আহমদ ৪৬ কেজি ওজনের কাতলা মাছের দাম হাঁকছিলেন ৯৫ হাজার আর ২৫ কেজি ওজনের বোয়াল মাছের দাম ৬৫ হাজার টাকা। ক্রেতারা ৫০ ও ৩৫ হাজার টাকা বললেও তিনি বিক্রি না করে আরও বেশি দরের অপেক্ষা করছিলেন।
মৌলভীবাজার শহরের বড়হাট এলাকার যুক্তরাজ্য প্রবাসী জাহাঙ্গীর আহমদ একটি আড়ই মাছ কিনেন ২৫ হাজার টাকায়। তিনি জানান, মেলা উপলক্ষে পাঁচ প্রবাসী বন্ধু নিয়ে মেলায় মাছ কিনতে এসেছেন। কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করেও মেলাজুড়ে ছিল ক্রেতা-বিক্রেতা আর কৌতূহলী মানুষের ঢল।
মেলায় আগত ক্রেতারা জানান, হাওর ও নদীতে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠা দেশীয় প্রজাতির রুই, কাতলা, বোয়াল, গজার, বাঘাইড় ও আইড় মাছ টাটকা কিনতে তাঁরা আসেন মেলায়। আর এ মাছ কেনার প্রস্তুতি তাঁরা নেন বেশ কয়েকদিন আগে থেকে।
মেলায় পার্শবর্তী কুশিয়ারা নদী, হাকালুকি হাওর, কাওয়াদীঘি হাওর, হাইল হাওর, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন প্রজাতির বিশাল আকৃতির মাছ নিয়ে আসেন।
মাছের মেলা অয়োজক মো. আশরাফ আলী খান জানান, গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই মাছের মেলায় প্রায় ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হতে পারে। মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব সরকারকে তারা দিলেও মেলার জন্য এখনও স্থায়ী কোনো স্থান গড়ে উঠেনি।
স্থানীয়রা জানায়, মেলা উপলক্ষে প্রবাসী অধ্যুষিত এ অঞ্চলের অনেক প্রবাসী দেশে আসেন। মেয়ের জামাইবাড়ির লোকজন ছাড়াও মেলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের আত্মীয়স্বজনরাও বেড়াতে আসে তাদের বাড়িতে। নানা স্বাদের মাছ আর নানা জাতের পিঠা তৈরিতে চলে উৎসব।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন চৌধুরী জানান, খোলা নিলাম ডাকে এ বছর মেলা বাবদ সরকার রাজস্ব পেয়েছে ভ্যাটসহ এক লাখ ৯৫ হাজার টাকা। আর মেলার জন্য নির্দিষ্ট মাঠ নিয়ে স্থানীয়দের দাবির বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।
যদিও এটি মাছের মেলা নামে পরিচিত তথাপি মাছ ছাড়াও ফার্নিচার, গৃহস্থালি সামগ্রী, খেলনাসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যের দোকান স্থান পায় এখানে। বর্তমানে এই মাছের মেলা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মিলনমেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।