এই দেশের জন্য কি আমরা যুদ্ধ করেছিলাম : নজরুল ইসলাম খান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, কোটি কোটি টাকা যারা পাচার করেছে, তারা আজ জামিন পায়, বিদেশে চিকিৎসা পায় অথচ যিনি এ দেশের জন্য এতো কিছু করলেন সেই বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় রায় দিয়ে মুক্তি দিচ্ছে না। তার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে দিচ্ছে না। এই দেশের জন্য কি আমরা যুদ্ধ করেছিলাম?
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় নজরুল ইসলাম খান এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে দলটি। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান।
এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, জিয়ার আদর্শ ও স্মৃতি কখনো নষ্ট হয়ে যাবে না। কারণ এ দেশের মানুষের মাঝে তিনি আছেন। গণতন্ত্র হত্যা করে বর্তমান সরকার বাকশাল কায়েম করেছিল, সেটাকে কবর দিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় বাগান করেছিলেন। আবার যখন স্বৈরাচার এরশাদ গণতন্ত্র হত্যা করে ঠিক তখনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া তার পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখন সরকারের যারা আছেন তারা জিয়াউর রহমানের কথা শুনতেই পারে না। কারণ যেখানে তারা ব্যর্থ হয়েছে, সেখানেই জিয়াউর রহমান সফল হয়েছিলেন। দুর্ভিক্ষের পরও তার সময় খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছিল। চিনি, শিল্প সব খাতে রপ্তানি করেছিলেন। জিয়ার আমলেই শ্রমিক পাঠিয়ে লাখ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসা শুরু হয়।
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, একজনের মা মারা গেলে তাকে ডান্ডাবেরি পরিয়ে আনা হয়। আমরা একটি বাকশাল সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যাচ্ছি, আমরা যদি আন্দোলনের মাঠে না থাকতাম তবে আন্দোলন চলত না। এই আন্দোলনের ময়দান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি ও আমার ভাই তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের লড়াইয়ের ময়দান। এই ময়দানে জয় অসম্ভাবি। জয় আমাদের আসবেই ইনশাআল্লাহ।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, শত অত্যাচারের মধ্যে যারা এখনো আছেন তারাই জিয়ার আদর্শের সৈনিক। তাদেরকে কেউ থামাতে পারেনি। জিয়াউর রহমানের জন্ম না হলে এই দেশ স্বাধীনতা পেতো না। নারী, শিশু অধিকার নিয়ে মাত্র ৩ বছরের মধ্যে তিনি অন্যস্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। একটা তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে এই দেশকে খাদ্যে স্বয়ংপূর্ণ করেছিলেন। এই সরকার জিয়া পরিবারকে ভয় পায়, বিএনপিকে ভয় পায়। কোনভাবেই আমাদেরকে ভাঙতে পারেনি। পারবে না। এই সরকার ভুয়া। এ পার্লামেন্টে সাড়ে ৬০০ এর বেশি সংসদ সদস্য। তাহলে ভাবেন, কোথায় আমাদের স্বাধীনতা, কোথায় আমাদের মুক্তি?
সেলিমা রহমান আরও বলেন, বন্ধু নামে একটি দেশ এই সরকারকে সহযোগিতা করে তারা সকলের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা এই দেশে তাদের সরকার বসিয়ে তাদের মধ্যে নিতে চায়। সেই ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, এ দেশের মানুষ ৭ জানুয়ারি তাদের ভোট না দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের মুখে কলঙ্ক লেপে দিয়েছে। বিশ্ববাসী এ সরকারের নির্বাচনকে নাটক ও প্রহসন বলেছে। আমরা মানুষের সেবা করার জন্য রাজনীতিতে নেমেছি। এ দেশের মানুষকে বলেছি ক্ষমতার জন্য আমরা রাজনীতি করতে আসিনি। মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য রাজনীতি করি। বিএনপি লগি-বৈঠার রাজনীতি করে না। বিএনপি ভদ্র মানুষের দল। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা নিরস্ত্র মানুষদের নিয়ে এ দেশের সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবো ইনশাআল্লাহ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশকে বিভাজন থেকে টিকিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। আমাদের হতাশ হওয়ায় কিছু নেই। এত কিছু করার পরও আমাদেরকে ভাঙতে পারেনি এই জালিম সরকার। এই জালিম সরকারকে পরাজিত করে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করা হবে ইনশাআল্লাহ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের মানুষকে আশার আলো দেখিয়েছিলেন একজন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। যদি দেশ স্বাধীনতা না পেত তবে তাঁর ফাঁসি হতো। সেটি জেনেও তিনি মা ও মাটির টানে তিনি যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পরও কোন জাতীয়তা ছিল না, কেউ আমাদেরকে নানা জাতি ভাবতো। আর তিনি তখন জাতিসত্তার জন্যে জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত দল আজ দেশের কথা বলে, স্বাধীনতার কথা বলে।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, জয়নুল আবেদীন ফারুক, তাইফুল ইসলাম টিপু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, মৎস্যজীবী দলের নেতা আব্দুর রহিম, আবুল কালাম আজাদ, ভিপি সেলিম, নাজমুল হাসান, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।