দেশের ৪৯ শতাংশ খাবার পানিতে রয়েছে ক্যানসারের ঝুঁকি : গবেষণা
বাংলাদেশের পানি নিয়ে একটি গবেষণায় ভয়ঙ্কর তথ্য তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিএলওএস ওয়ান। সেই গবেষণা বলছে, এদেশের অনেক মানুষ বিপজ্জনকভাবে উচ্চ মাত্রার আর্সেনিক বিদ্যমান পানি পান করছেন। এমনকি, যে পরিমাণ পানি পান করছে, তার প্রায় অর্ধেকই এই দোষে দুষ্ট। আরও বলা হয়েছে, ৪৯ শতাংশ খাবার পানিতে ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
পিএলওএস ওয়ান জার্নালের বরাতে ব্রিটিশ গণমাধ্যমটির প্রতিবেদন বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, অনাকাঙ্খিত বন্যা এবং জলবায়ু উত্তপ্ত হওয়ার কারণে সৃষ্ট চরম আবহাওয়া দেশের পানীয় জলে আর্সেনিকের বিপজ্জনক মাত্রার নির্গমনকে ত্বরান্বিত করছে। ফলে ফুসফুস, মূত্রাশয়, কিডনি এবং ত্বকের ক্যানসার হতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীরা গবেষণার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পান করার উপযোগী নমুনা পানি সংগ্রহ করেন। আর্সেনিক নিঃসরণের মাত্রা বুঝতে পানিতে অক্সিজেনের ঘনত্ব, পিএইচ এবং তাপমাত্রা পরীক্ষার পর ৪৯ শতাংশ পানিতে ক্যানসার সৃষ্টিকারী আর্সেনিকের উপস্থিতি দেখতে পান তারা। গবেষণায় আরও দাবি করা হয়, সংকটে আছে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত পানীয় জলের নিরাপদ সীমা প্রতি লিটারে সর্বোচ্চ ১০ মাইক্রোগ্রাম। বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানির প্রায় ৪৯ শতাংশে আর্সেনিকের ঘনত্ব ওই সীমার বেশি।
গবেষণার লেখক ও নরউইচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেথ ফ্রিসবি বলেন, ‘আর্সেনিকদূষণ প্রাকৃতিকভাবে হয়েছে। এটি হিমালয়ের ওপর থেকে পলিকে ধুয়ে ফেলেছ।’ তিনি আরও বলেন, ‘সুতরাং গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, ইরাবদি ও মেকং নদীর অববাহিকা থেকে আসা সমস্ত পলি প্রাকৃতিকভাবে আর্সেনিক সমৃদ্ধ।’
ড. সেথ ফ্রিসবি বলেন, ‘মানুষ যখন ভূ-পৃষ্ঠের জল পান করত, তখন কোনো সমস্যা ছিল না।’ কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ ভূপৃষ্ঠের জল বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এটি আর্সেনিককে অদ্রবণীয় করে তোলে এবং এটি পানি থেকে সরিয়ে দেয়। কিন্তু, গভীর নলকূপের পানি বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেনের সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই। এজন্য হঠাৎ করেই এই গভীর নলকূপের পানি জনস্বাস্থ্য সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
দীর্ঘস্থায়ী আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় আক্রান্তদের হাতের তালু ও পায়ের তলায় ত্বকের কেরাটিনাইজেশনের মাধ্যমে বাহ্যিকভাবে প্রকাশ পায়। অনুরূপ প্রক্রিয়াগুলো ভেতরেও চলে। ফলে তাদের ফুসফুস ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোতে জমা হয়ে ক্যানসার সৃষ্টি করে।
ফ্রিসবি বলেন, "আমার বর্তমান অনুমান বলছে, প্রায় ৯০ লাখ বাংলাদেশি ফুসফুস ও মূত্রাশয় ক্যানসারে মারা যাবেন।’