রাশেদ হত্যায় মামলা হয়েছে কি না জানতে চেয়েছেন আদালত
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পরানগঞ্জের হিরণ পলাশিয়া এলাকায় কিশোরগ্যাং কর্তৃক শিশু রাশেদ মিয়া (১১) হত্যার ঘটনায় পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
রাশেদের বাবা আজিম উদ্দিন গত মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম রওশন জাহানের আদালতে মামলা গ্রহণের জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে দরখাস্ত করেন। আদালত সেই নালিশি দরখাস্ত পেয়ে শিশু রাশেদ মিয়া হত্যায় পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন।
রাশেদের বাবা থানায় মামলা করতে না পেরে বাধ্য হয়ে আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন বাদীর আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান ছানা।
পরানগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হানিফ সরকার শিশু রাশেদ মিয়া হত্যাকে নিছক দুর্ঘটনা উল্লেখ করে বিভিন্ন মহলে অপপ্রচার চালিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে নিহত রাশেদ মিয়ার পরিবার অভিযোগ করেছে।
নালিশি দরখাস্ত, আইনজীবীর ভাষ্য ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ জানুয়ারি সকালে শিশু রাশেদ মিয়ার সঙ্গে খেলাধূলা নিয়ে বাঘাডোবা এলাকার কিশোর গ্যাং সদস্য মাইন উদ্দিন (১৩), আকাশ মিয়া (১৪), মহিদুল ইসলাম (১৩), শরিফ মিয়া (১৩), রিপন মিয়া (১৩), সবুজ (১৪) ও মীর কান্দাপাড়ার শাকিব আল হাসানের (১৫) ঝগড়া হয়। পরে ওই দিনই শেষ বিকেলে তারা রাশেদকে কৌশলে উজ্জ্বল মিয়ার নির্মাণাধীন বাড়িতে ডেকে নিয়ে মারধর করে নির্মমভাবে হত্যা করে। শিশু রাশেদের শরীরে আঘাতের ফলে রক্ত ছড়িয়ে পরে। নির্মাণাধীন বাড়ির নির্মাণ সরঞ্জামেও দেখা গেছে রক্তের দাগ। নালিশি দরখাস্তে আসামিদের কিশোরগ্যাং সদস্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান ছানা বলেন, নালিশি দরখাস্ত পেয়ে আদালত কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে জানতে চেয়েছেন এ ঘটনায় অপমৃত্যু বা নিয়মিত কোনো মামলা হয়েছে কি না। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিষয়টি লিখিতভাবে আদালতকে জানানোর আদেশ দিয়েছেন।
আইনজীবী আরও বলেন, নিহত রাশেদের মাথায় ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ণ রয়েছে । তার একটি দাঁতও ভাঙ্গা হয়েছে। এতে এটি একটি হত্যাকাণ্ড বলেই মনে হয়।
এ বিষয়ে পরানগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবু হানিফ সরকার বলেন, ঘটনার আধা ঘণ্টা পর আমি ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে শুনি সন্ধ্যায় বাঘাডোবার উজ্জ্বল মিয়ার নির্মাণাধীন বাড়িতে খেলাধুলা করছিল ছেলেরা। খেলার টাকার ভাগাভাগি নিয়ে সেখানে ঝগড়া পরে ধাক্কাধাক্কি হয়। এ সময় রাশেদের ওপর একটি দেয়াল ভেঙে পড়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টি আমি পুলিশের সামনে মিটমাটের প্রস্তাব দিতেই ঘটনাস্থলে মিছিল শুরু করে বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে স্থানীয়রা ওই কিশোরদের আটক করে পুলিশে দিলেও পরের দিন পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বিষয়ে পুলিশের কোনো গাফিলতি নেই। নিহত রাশেদের বাবাকে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও তিনি মামলা দিতে আসেননি। তিনি থানায় না এসে আদালতে নালিশ করেছেন বলে শুনেছি।’