শরীফার গল্প নিয়ে যা বলছেন মিজানুর রহমান আজহারি
সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বইয়ের একটি গল্প নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এ বিষয়ে কথা বলেছেন আলোচিত ইসলামি বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারি। গতকাল বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তার এক্স ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টে তিনি এ গল্পকে ‘না’ বলার আহ্বান জানান। যদিও এর আগেরদিন মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, পাঠ্যবইয়ে আলোচিত শরীফার গল্প নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কোনো বিভ্রান্তি থাকলে পরিবর্তন হবে।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ড. মিজানুর রহমান আজহারি এক্সের পোস্টে লেখেন, ‘কোন শিয়াল যদি বলে— "আমি নিজেকে মুরগি মনে করি", তাহলে কি শিয়ালকে মুরগির সাথে রাখা যাবে? অবশ্যই না। রাখলে মুরগি যেমনি তার অস্তিত্ব হারাবে, ঠিক তেমনি এই রূপান্তর মতবাদের কারণে নারী-পুরুষের প্রাকৃতিক বাইনারিও অস্তিত্ব হুমকিতে পড়বে।’ তিনি আরও লেখেন, ‘আমাদের কোমলমতি শিশুদের ফিতরাত কলুষিত করার মানব অস্তিত্ব বিধ্বংসী এই মতবাদকে স্পষ্ট ভাষায় ‘না’ বলুন। দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সরব প্রতিবাদ করুন। পশ্চিমা এই অসভ্যতার বিস্তার রুখে দেওয়ার সময় এখনই। বিকৃত মনস্করা যেন মনে না করে, দেশের সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষেরা প্রতিবাদের সামর্থ্য হারিয়েছে।’
কয়েকদিন আগে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষাক সপ্তম শ্রেণির বইটিতে প্রকাশিত ‘শরীফার গল্প’ পৃষ্ঠাটি ছিঁড়ে ফেলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর চাকরি হারান তিনি। তারপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা আরও ঘণীভূত হয়। গত মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ম্যারি মাসদুপুইয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের শরীফার গল্প বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, পাঠ্যবইয়ে আলোচিত শরীফার গল্প নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কোনো বিভ্রান্তি থাকলে পরিবর্তন হবে। ব্র্যাকের বিতর্ক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, বিষয়টি নিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করব। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে ঘটনাটি জেনে তারপর আলোচনা করব। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা একটি ভিডিও দেখেছি।
শরীফা গল্পটি নিয়ে গতবারও বিতর্ক উঠেছিল, এবার শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। এ বিষয়ে কথা উঠলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, সেটা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) যারা সহকর্মী আছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করব। যদি একটি গল্প নিয়ে প্রতিক্রিয়া হয়, কেন হচ্ছে সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। আমাদের দেশে একটি গোষ্ঠীর ধর্ম ব্যবহার করে অরাজকতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি করার একটি প্রবণতা আছে। গত বছরও সেটা ছিল।
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, একটি সংগঠন থেকে কিছুদিন আগে আমার কাছে কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। কওমি মাদরাসার কিছু শিক্ষক এসেছিলেন। সেখানে তারা দাবি করেছেন, এখানে ট্রান্সজেন্ডার শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। বিভ্রান্তি সৃষ্টির বিষয়টি তারা আমাদের নজরে এনেছিলেন। আমরা যখন আলোচনা করেছি তখন দেখেছি শব্দটা ট্রান্সজেন্ডার নয়, থার্ড জেন্ডার।
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আরও বলেন, আইনত স্বীকৃত যে তৃতীয় লিঙ্গ যাদের সমাজে হিজড়া নামে পরিচিত। তারা দেশের নাগরিক। তাদের নাগরিক অধিকার রয়েছে। তবে, গল্প উপস্থাপনার ক্ষেত্রে যদি এমনভাবে উপস্থাপন হয়, যেখানে এ ধরনের বিভ্রান্তি এবং বিতর্ক সৃষ্টির প্রয়াস থাকে তাহলে এ গল্পের উপস্থাপনা পরিবর্তন করা যায় কি না, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করব। তাদের প্রতি সম্মান রেখে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে যদি ভিন্ন কোনো সুযোগ থাকে তাহলে সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মতামত দেবেন। এটা যেহেতু বিশেষায়িত বিষয়। আমরা পলিসি লেভেল সেটি মন্তব্য করতে চাই না।’