বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তে ফের পড়ল মর্টারশেল
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মিয়ানমার সীমান্তজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আজ বুধবার (৩১ জানুয়ারি) ভোররাতে বিকট শব্দে কেঁপে উঠে তুমব্রু-ঘুমধুম সীমান্ত অঞ্চল।
মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও স্বাধীনতাকামী গ্রুপের মধ্যে চলমান সংঘর্ষে ফের ওপার থেকে নিক্ষেপ করা দুটি মর্টারশেল এসে পড়েছে তুমব্রু কোণারপাড়া ও পশ্চিমকুল এলাকায়। তবে তা মাটিতে পড়ায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সীমান্তে ব্যাপক তৎপর রয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
আজ সকালে সীমান্তের চলমান সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন, সহকারী পুলিশ সুপার মো. আমজাদ হোসেন, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া, সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট রাজেস কুমার বিশ্বাস, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা, ঘুমধুম তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মাহাফুজুর রহমানসহ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনির কর্মকর্তারা।
পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘সীমান্তের চলমান সার্বিক পরিস্থিতি, ঘুমধুম ইউনিয়নে নির্মাণাধীন রোহিঙ্গা ট্রানজিট পয়েন্ট, সীমান্তবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করেছি আমরা। এপারের পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে। এ পর্যন্ত সীমান্তে বেশ কয়েকটি মর্টারশেল বিস্ফোরণের খবর রয়েছে। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে, প্রয়োজন পড়লে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে পরীক্ষাকেন্দ্র।’
এদিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমানা চিহ্নিত হয়েছে ছোট্ট একটি পাহাড়ি ছড়ার মাধ্যমে। যেটি তুমব্রু খাল নামে পরিচিত। আর নোম্যান্স ল্যান্ড পার হয়ে কাঁটাতার দুই দেশেকে ভাগ করেছে। সেই কাঁটাতারের ওপারে দূর থেকে দেখা যায় ব্যাপক তৎপর সেদেশের বিদ্রোহী বা স্বাধীনতাকামী দলের সদস্যদের। আর এপারের সীমানা পাহারায় টহল দিচ্ছে বিজিবি। এমন চিত্র বলে দেয় দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনার কথা। এই সীমান্ত এলাকায় দিনে কিছুটা কম থাকলেও রাতের আঁধারে বাড়ছে ব্যাপক গোলাগুলি। সবশেষে আজ ভোররাতে বিকট শব্দে কেঁপে উঠে তুমব্রু-ঘুমধুম সীমান্ত অঞ্চল। এদিকে অনেকে রাতে ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে ভোরে ফিরছে ঘরে। সীমান্তের এমন ভয়ঙ্কর উত্তেজনায় শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে অনেকে গোলাগুলির এমন শব্দের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য জুলফিকার ভুট্টো বলেন, সীমান্তের ওপারে গতকাল মঙ্গলবার ও আজ ১৮টি মর্টারশেলের আওয়াজ শুনেছে সীমান্তবাসী। আজও এপারে দুটি মর্টারশেল এসে পড়েছে। তবে তা মাটিতে এসে পড়ায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সীমান্তে বিজিবির জোয়ানরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ভয়ের তেমন কিছু না থাকলেও আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে দূরদূরান্তে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে সীমান্ত অঞ্চলের অনেকে।
সীমান্তের তুমব্রু পশ্চিম কুলের বাসিন্দা আবদুর রহিম প্রকাশ বাহাদুল্লাহ বলেন, ‘আমার বাড়ির আঙিনায় মর্টারশেলের গোলা এসে পড়ে। বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায় সবার। আতঙ্কে ছোটাছুটি করে আশপাশের মানুষ। ৮-১০ দিন ধরে সীমান্তের ওপারে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী বাহিনীর মধ্যে সংঘাত চলে আসছে। কয়েকদিন ধরে গোলাগুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপের শব্দ জোড়ালো হয়েছে। মাঝেমধ্যেই গুলি ও মর্টারশেল এসে পড়ছে বাংলাদেশ সীমান্তে। আতঙ্কে সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন অভিভাবকরা।