জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের স্বর্ণার ডলার-মুঠোফোন চুরি, গ্রেপ্তার যুবক
বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তারের বাসায় চুরির ঘটনায় জড়িত আল আমিন দেওয়ান ওরফে আজানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল মঙ্গলবার দিনগত রাতে অভিযান চালিয়ে দিনাজপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় চুরি যাওয়া আইফোনসহ অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করা হয়।
আজ বুধবার (৩১ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আর মঈন।
খন্দকার আর মঈন বলেন, গত ২৯ জানুয়ারি রাজধানীর তেজকুনীপাড়া খেলাঘর মাঠে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তার ও তার সতীর্থ খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনুশীলনকালে তার ব্যবহৃত দুটি আইফোন চুরি হয়। একইদিনে তার বাসা থেকে ৩ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার, ব্যাংকের চেক বই ও ভিসা কার্ডসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির ঘটনাও ঘটে। ওই ঘটনায় ক্রিকেটার স্বর্ণা আক্তার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করেন।
খন্দকার আর মঈন বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাতে র্যাব-১৩ ও র্যাব-২-এর একটি দল আল আমিন দেওয়ানকে গ্রেপ্তার করে। সে সময় উদ্ধার করা হয় চারটি আইফোনসহ পাঁচটি মোবাইলফোন। এ ছাড়া প্রাইম ব্যাংকের একটি চেক বইয়ের পাতা ও একটি মাস্টার কার্ড, বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা, তিনটি হাত ঘড়ি, চারটি চেইন, একটি নোজপিন, একটি ব্রেসলেট, দুটি আংটি ও একটি হ্যান্ড ব্যাগ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চুরির ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে আল আমিন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, আল আমিন মূলত প্রতারণার টার্গেট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আইডি খুলে নিজেকে বড় ব্যবসায়ী পরিচয় দিতেন। সুন্দরী নারীদের আকৃষ্ট করতে নিয়মিত বিভিন্ন স্টাইলে ছবি পোস্ট করতেন। এ ছাড়া নিজেকে প্রদর্শনের জন্য টিকটক ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করতেন। এভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সুন্দরী নারীদের সঙ্গে কৌশলে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। পরবর্তীতে আল আমিন ওইসব নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখাতেন। আস্থা অর্জন করে নিয়মিত তাদের সঙ্গে দেখা করতেন। অনেক ক্ষেত্রে কোন নারীকে বিয়ে করে বা বিয়ে না করে সুবিধাজনক সময়ে তাদের নগদ অর্থসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে কৌশলে আত্মগোপনের জন্য অন্য এলাকায় অবস্থান করতেন। সে সময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে সংশ্লিষ্ট ফেসবুক আইডি ডিলেট করে দিতেন তিনি। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কিছুদিন পরে পুনরায় তিনি কারও সঙ্গে প্রতারণার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেকটি আইডি খুলে একই কাজ করতেন বলে জানা যায়।
র্যাব জানায়, একই ধরনের টার্গেট নিয়ে আল আমিন নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তার পরিচয় ও বর্তমানে ছুটিতে অবস্থান করে কাপড়ের ব্যবসা করছেন বলে একজন নারী ক্রিকেটার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত হন। গড়ে তোলেন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। একপর্যায়ে পরিচয়ের ১৭ দিনের মাথায় গত ১২ জানুয়ারি আল আমিন ওই নারী ক্রিকেটারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। জাতীয় ক্রিকেট দলের নারী অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তারের সঙ্গে ওই নারী ক্রিকেটারসহ চারজন প্রায় তিন বছর ধরে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করে আসছিলেন। কৌশলে ওই নারী ক্রিকেটারকে বিবাহের সূত্র ধরে আল আমিন ওই ফ্ল্যাটে নতুন স্ত্রীকে নিয়ে একটি আলাদা রুমে বসবাস করতে থাকেন। এ সময় প্রতারণার জন্য তিনি তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং ব্যবসায়ীকসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কৌশলে বিভিন্ন সময় তাদের কাছ থেকে পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
খন্দকার আর মঈন বলেন, গত ২৯ জানুয়ারি জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার স্বর্ণাসহ তার তিন রুমমেটসহ সতীর্থ খেলোয়াড়দের নিয়ে রাজধানীর তেজকুনীপাড়া খেলাঘর মাঠে অনুশীলনে যান। সে সময় আল-আমিন বাসায় অবস্থান করছিলেন। পরবর্তীতে পরিকল্পনা অনুযায়ী অলরাউন্ডার স্বর্ণার রুমের ওয়ারড্রয়ারের তালা ভেঙে ডলার, একটি চেক বই, ভিসা কার্ড, তার রুমমেট অন্য নারী ক্রিকেটারের ব্যাগ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা ও তাদের ব্যবহৃত ব্যাগ করে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে তেজকুনীপাড়ার খেলাঘর মাঠে যান। সে সময় তাদের অনুশীলনের ভিডিও করার কথা বলে অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তারের ব্যবহৃত দুটি মোবাইলফোন ব্যাগ থেকে নিয়ে কিছুক্ষণ ছবি তুলে কৌশলে মাঠ থেকে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে আল আমিন স্বর্ণা আক্তারের ব্যবহৃত একটি আইফোন রাজধানীর একটি পুরাতন মালামাল বিক্রির মার্কেটে ১১ হাজার টাকায় বিক্রি করে বাসযোগে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে প্রথমে রংপুর গমন করে রাতে হোটেলে অবস্থান করে। পরের দিন রংপুর থেকে দিনাজপুর গিয়ে একটি হোটেলে অবস্থান করেন। অনুশীলন শেষে স্বর্ণা আক্তার আল আমিনকে দেখতে না পেয়ে অন্য নারী ক্রিকেটারের মোবাইলফোন থেকে ব্যবহৃত মোবাইলফোন দুটিতে কল করলে বন্ধ পান। পরবর্তীতে তারা বাসায় ফিরে ফ্ল্যাটের মূল দরজা লক করা অবস্থায় দেখতে পায়। এ সময় বাসার দারোয়ানের সহযোগিতায় তালা ভেঙে বাসার ভিতরে প্রবেশ করে রুমের সমস্ত জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায় দেখতে পায়।
র্যাব জানায়, আল-আমিন ২০১১ সালে রাজধানীর একটি স্কুল থেকে এসএসসি সম্পন্ন করেন। তিনি এর আগে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে কাপড়ের দোকানে চাকরি করতেন। পরবর্তীতে তিনি ২০১৬ সাল থেকে নারীদের সঙ্গে প্রতারণাসহ অনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করা ও বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা করতে থাকেন। প্রতারণার পর পার্শ্ববর্তী দেশে আত্মগোপনে চলে যেতেন।