ফের শুরু মোংলা বন্দরের ইনারবার ড্রেজিং
ড্রেজিংয়ের উত্তোলিত বালু (পলি মাটি) ফেলার জায়গা জটিলতা কেটে যাওয়ায় মোংলা বন্দরের ইনারবার চ্যানেলের ড্রেজিং কার্যক্রম ফের শুরু হয়েছে। খনন করা পলি ফেলার জায়গা সংকটে দীর্ঘ প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর আজ শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল হতে বন্দরের পশুর চ্যানেলের/নদীর বেসক্রিক বয়া এলাকা থেকে এই ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রথম দিন সেকশন ৪-এর আওতায় বাল্কহেড ড্রেজারের মাধ্যমে এই খননকাজ শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান জানান, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে নিয়মিত পশুর চ্যানেল ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই।
২০২১ সালের ১৩ মার্চ শুরু হওয়া ইনারবার ড্রেজিংয়ের খনন করা পলি ফেলার জায়গার অভাব দেখা দিলে মাঝপথে বন্ধ থাকে। তবে আপাতত খনন করা পলি মাটি রাখার জায়গা নির্ধারণ হওয়ায় শুক্রবার থেকে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই ড্রেজিংয়ের মাটি রাখা হচ্ছে জয়মনি এলাকায়। এবার থেকে ইনারবারের ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার রাসেল আহম্মেদ খান বলেন, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে খনন করা পলি মাটি রাখার জায়গার অভাব দেখা দিলে ইনারবারে ড্রেজিং বন্ধ থাকলেও পশুর চ্যানেল স্বাভাবিক ছিল। জাহাজ চলাচলে সমস্যা হয়নি। তবে নিয়মিত ড্রেজিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখা না গেলে ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে ঝুঁকি তৈরি হবে। এজন্য পুরোনো জায়গা জয়মনিতে মাটি ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে আজ থেকে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করা হয়। এর আগে এই ড্রেজিং কার্যক্রম শুরুর আগে সার্ভে করে দেখা হয়েছে যে কতটুকু পলি জমেছে। সেই সার্ভে শেষ করে এই ড্রেজিং শুরু করা হয়। এই চ্যানেলে ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রাখতে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবসহ মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের (বন্দর চ্যানেল) হাড়বাড়িয়া এলাকা থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত এলাকার নাম ‘ইনারবার’। ইনারবারের ২৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার এলাকায় ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের উদ্বোধন করা হয় ২০২১ সালের ১৩ মার্চ। ওই বছরের ১০ এপ্রিল ড্রেজিংয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। সেই সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৯৩ কোটি টাকা।
ড্রেজিং করা বালু বা পলি মাটি ফেলার জন্য মোংলা উপজেলায় ৭০০ একর ও খুলনার দাকোপ উপজেলায় বানিশান্তা এলাকায় ৩০০ একর জমি হুকুম দখল করা হয়। মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি এলাকার জমিতে বালু ফেলা হয়। কিন্তু পশুর নদের পূর্ব পাশের খুলনার দাকোপ উপজেলার বানিশান্তার তিন ফসলি জমিতে বালু ফেলা ঠেকাতে আন্দোলন শুরু করে এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সংগঠন। তাদের আপত্তির মুখে সেখানে বালু ও মাটি ফেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে প্রায় দুই বছর ধরে ইনারবার ড্রেজিং বন্ধ ছিল।
এ অবস্থায় মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের সানবান্ধা মৌজায় ২৬২ একর জমিতে বালু ফেলানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হলে সেখান থেকে ভূমি মন্ত্রাণালয়ে পাঠানো হয়। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ২০২২ সালের জুন মাসে। এ পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৩৪ শতাংশ। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯২কোটি টাকায়, যা গত বছরের ৪এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল ও হাইড্রোলিক্স) শেখ শওকত আলী বলেন, ইনারবারের গভীরতা সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় মিটার। ড্রেজিং করে সাড়ে আট মিটার করার কথা। ড্রেজিং করা স্থানগুলো থেকে যে পরিমাণ পলি অপসারণ করা হয়েছিল, গত প্রায় দুই বছরে তার ৭০ ভাগ পলি আবারও জমা হয়েছে। এ অবস্থা ড্রেজিং প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ড্রেজিং কাজ বন্ধ থাকায় এত দিনে পলি পড়ে নাব্য আরও কমে গেছে। এ ছাড়া ড্রেজারের তেলসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে।
বালু ফেলার জায়গার বিষয়ে শেখ শওকত আলী বলেন, নতুন করে কোনো জায়গা না মেলায় পুরোনো জায়গা জয়মনি এলাকায় আপাতত বালু ফেলা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে সেকশন ৪-এর আওতায় বাল্কহেড ড্রেজারের মাধ্যমে মাটি কেটে অন্য একটি বাল্কহেডে তোলা হচ্ছে। পরে তা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
আগামী রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে কাটার সাকশন ড্রেজার দিয়ে পুরোদমে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে। খনন করা সেই পলি মাটি রাখা হবে আগেরই ডাম্পিং এলাকা জয়মনিতে।