নারায়ণগঞ্জের সমস্যা সমাধানে এক টেবিলে সেলিম-শামীম-আইভী
নারায়ণগঞ্জ প্রশ্নে এক টেবিলে বসলেন সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান। নাগরিক সমস্যা যানজট ও ফুটপথ দখলের সমাধানে গোল টেবিলে বৈঠকের আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব। সেখানেই তারা মতামত তুলে ধরে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য উপযোগী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান। তারা বাসযোগ্য নারায়ণগঞ্জ গড়তে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করার আশা ব্যক্ত করেন।
আজ শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) গোল টেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিল জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। জেলা প্রশাসন জানায়, এসএসসি পরীক্ষার আগে, অর্থাৎ আগামী ১৫ তারিখের মধ্যে এসব নিরসন করা হবে। আগামীকাল রোববার থেকে রোড পারমিট ছাড়া ও অবৈধ পার্কিং করা হলে যানবাহন ডাম্পিং করা হবে।
প্রশাসনকে উদ্দেশ করে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘আমাদের বাসই তো চলে না। তাহলে কেন বাইরে থেকে এসে দুর্দান্ত প্রতাপের সঙ্গে চাষাঢ়ায় বাস রেখে দেবে। আপনারা কন্ট্রোল করেছেন, তখন যানজট ছিল না। রোজার সময় কন্ট্রোল করে ফেলেন। আমরা আমাদের কাজ সঠিকভাবে করলে কোনো সমস্যা থাকে না। ট্রাফিক তো সিটি করপোরেশন বা এমপির ওপর দোষ চাপাতে পারে না। আপনাদের কাছে চিঠি দেওয়া আছে বৈধ বা অবৈধ স্ট্যান্ডের। একটাও কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’
আইভী আরও বলেন, ৬০০ হকারদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। তারা সবাই দোকান বিক্রি করে রাস্তায় বসছে। প্রতিটি সড়ক হকারদের দখলে। আমাদের সুনির্দিষ্টভাবে কাজের কথা বললে করে দেব। তবে, ট্রাফিক কন্ট্রোলের দায়িত্ব নিতে হবে। এসপি সাহেব বলেছেন, ওই এলাকায় তার বাড়ি, তাই তিনি যান না। তাহলে কী সেই এলাকায় মানুষ থাকে না? আমাদের কেন বন্দি করে রেখেছেন? আপনারা সেখানে থাকলে কিছুক্ষণের জন্য হলেও এই রাস্তাটা যানজটমুক্ত থাকত। ট্রাকস্ট্যান্ড নিয়ে মামলা হয়েছে। সেটা উচ্ছেদ করে জানাতে বলেছে কোর্ট। একটা লেন ছিল আগে, এখন তিনটি লেন হয়েছে। হকার সড়কে বসতে পারবে না। এটা আজ আমার বড় দুই ভাইকে কমিটমেন্ট দিতে হবে। মেয়রদের কথা প্রশাসন শোনে না, এমপিকেই এটা বলতে হবে।’
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেন, ‘সিদ্ধিরগঞ্জে একটা সমস্যা, ইপিজেড ছুটি হলে রাস্তাটা অকেজো হয়ে যায়। ফুটওভার হলে সেই রাস্তার সমস্যাটা সমাধান হয়ে যাবে। আমি আর আইভী একটা কাগজে সই করে পাঠালেও এটা (সমাধান) হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘ভালো কাজ আমরা সবাই মিলে করব। পুরো শহর হকার মুক্ত করুন। কবে করবেন জানান। মেয়র আবেদন করলে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট দেবে।’
শামীম ওসমান বলেন, ‘বিআরটিএ প্রয়োজনের অতিরিক্ত গাড়ির পারমিশন দেবে না। আর সেক্ষেত্রে আমাদের নারায়ণগঞ্জের পরিবহণ ব্যাবসায়ীদের আগে মূল্যায়ন করা উচিত। সিএনজি ও অটোরিকশার পারমিশন সিটি করপোরেশন দিলে, এই অজুহাতে সারা দেশে সবাই পারমিশন দেবে। এটা কেন সিটি করপোরেশন দেবে? এটা আপনাদের কাজ। স্ট্যান্ড কোথায় হবে, দরকার থাকলে নির্দিষ্ট জায়গায় বসবে। এরা কিন্তু ফ্রি বসে না। তারা কাউকে না কাউকে টাকা দেয়।’
সমস্যার সমাধান করতে হলে সবাইকে কাজ করতে হবে জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমার তরফ থেকে কোনো বাধা আসবে না৷ এটা সবার জন্য হতে হবে। মীর জুমলা সড়ক বন্ধ। হাইস্কুলের সড়কটা খালি থাকলে সেটা মীর জুমলা সড়ক হয়ে বাসস্ট্যান্ডে চলে যাবে। ছোট একটা সড়কে ১৬ বার ট্রেন চললে পুলিশ কেন ফেরেশতাদের কাছেও যানজট কমানো সম্ভব না। আমরা রেল মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বলতে পারি ট্রেন চাষাঢ়ায় থামুক। শুধু ইঞ্জিন ঘুরিয়ে নিয়ে আসুন। এতে বেশি সময় লাগবে না।’
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে সমস্যার শেষ নেই। আজকে আমরা উঠে গেলাম আর সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমনটা নয়। তিনি বলেন, আমার ছোট বোন (সেলিনা হায়াৎ আইভী) একটু উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন। এটা স্বাভাবিক। আমার দায়িত্ব যেটা নয়, সেটার জন্য কেন আমাকে দোষারোপ করা হবে, আমি সেটা জানতে চাই।
সেলিম ওসমান আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের সমস্যা ময়লা। এই ময়লা কোথায় যাবে। বাধ্য হয়ে লিংক রোডে গিয়েছে। এখন শীতলক্ষ্যার কোণায়, বন্দরে যায়। যতক্ষণ রাস্তা পরিষ্কার না হবে, ততক্ষণ এসব সমস্যার সমাধান হবে না। তিনি বলেন, রাস্তার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের হাতে। ফুটপথ কার হাতে? এটা কি মাসলম্যানদের হাতে? এই দখলকারীরা কারা? এরা নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা না। সারা দেশের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি, মানুষ ভালো থাকুক। আমাদের একত্রিত হতে হবে। একটা ফুটপথও দখলে থাকবে না। এটা না থাকলে মাদক, ইভটিজিংও থাকবে না।
হাইস্কুল ও নারায়ণগঞ্জ কলেজে ১৫ হাজার শিক্ষার্থী। তাদের জান বের হয়ে যায় পরীক্ষা থাকলে। আমরা বাস কিনে দিয়েছি। কিন্তু কলেজ গেটে বাস কোথা দিয়ে যাবে? কেন এই রাস্তা বারবার উচ্ছেদ করার পরেও কাঁচাবাজার বসে সেখানে? এগুলো শক্ত হাতে প্রতিহত করতে পারলে বসব, নয়ত আমরা বসব না, যোগ করেন সেলিম ওসমান।
সেলিম ওসমান আরও বলেন, এখানে কোনো রাজনীতি থাকবে না। রাজনীতি একটাই, নারায়ণগঞ্জের মানুষকে শান্তিতে চলাচল করতে দিতে হবে। আমরা মেয়রকে অবশ্যই সহযোগিতা করব। আমরা করোনার সময়ও করেছি। আমরা স্কুল করেছি, কিন্তু বাচ্চারা স্কুলে যায় কি না, খবর রাখতে পারি না।
আমরা একসঙ্গে বসব স্বেচ্ছাসেবী নেব। আগামী এক বছরের মধ্যে আমরা নারায়ণগঞ্জে কোনো সমস্যা রাখব না। আমার মেয়র আইভীকে নিয়ে আমার ছোট ভাই শামীম ওসমানকে নিয়ে আমরা এটা করব। শামীম ওসমানকে আমরা শক্তি হিসেবে কাজে লাগাব, যোগ করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আগামীকাল থেকেই যানজটমুক্ত নারায়ণগঞ্জ গড়ে তোলা হবে।
গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দীপু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালকভাবে প্রবীর কুমার সাহা, বিকেএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি মনসুর আহমেদ প্রমুখ।