‘আমার কলিজার টুকরা রহমাতুল্লাহকে ফিরিয়ে দিন’
২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট দিনগত রাত আনুমানিক ১২টার সময় ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বড় নালগ্রামের মৃত আব্দুর রবের ছোট ছেলে ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি রহমাতুল্লাহকে (২০) র্যাবের পোশাক এবং সাদা পোশাকে তুলে নেওয়ার দাবি করেন তার পরিবার। গত ৫ মাসে র্যাব কার্যালয়, বিভিন্ন ডিবি অফিস, বিভিন্ন থানা ও হাসপাতাল ঘুরেও তার সন্ধান পায়নি স্বজনেরা। নিখোঁজ রহমাতুল্লাহকে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানিয়েছেন তার মা মমতাজ বেগম। আজ সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আকুতি জানান তিনি।
‘আমার কলিজার টুকরা রহমাতুল্লাহকে ফিরিয়ে দেন’ বলে কেঁদে ওঠেন মা মমতাজ বেগম। তিনি বলেন, ‘আমি কাকে নিয়ে বেঁচে থাকব। আমার শ্বাসপ্রশ্বাস রহমাতুল্লাহ। নিখোঁজ হওয়ার আট দিন আগে থেকেই প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছিল, কিছু খেতে পারছিল না। আমার পাশেই ঘুমিয়ে ছিল। আমার পাশ থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো, আজও ফিরে এলো না।’
রহমতু্ল্লাহর মা বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি বলে দিন, আমি কোথায় কার কাছে গেলে আমার সন্তানকে ফিরে পাব?’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রহমাতুল্লহর বড় বোন রাজিয়া আক্তার। তিনি বলেন, আমার বাবা ২০১৩ সালের ১৮ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেছেন। সংসারে আমি বড় মেয়ে, আমার মেঝ ভাই ওবায়দুর বর্তমানে সৌদি আরবে আছেন। তার স্ত্রী সাথী আক্তার, আমার মা মমতাজ বেগম ও আমাদের সবচেয়ে ছোটভাই রহমাতুল্লাহ একই বাড়িতে থাকে। গত ২৯ আগস্ট দিনগত রাতে আমাদের বাড়ি থেকে আইন প্রয়োগকারীর সদস্যরা বাড়ির মূল ফটকে কড়া নাড়ে। আমার মা ঘরের দরজা ও ফটক খুলে বাইরে বের হলে তাদের কয়েকজন ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে এবং আমার ভাই রহমাতুল্লাহকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। কী কারণে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বলে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরের দিন আমার মা মানিকগঞ্জ ও ধামরাই যাওয়ার পর পুলিশ কোন তথ্য দেয়নি। পরবর্তীতে ৭ অক্টোবর ধামরাই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ করে। এর পাঁচ মাস পরেও আমার ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার মা প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’
রহমতুল্লাহর বড় বোন বলেন, ‘আমার ভাই কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য না, তার বিরুদ্ধে কোথাও কোন মামলা ছিল না। তারপরও সে যদি কোনো অন্যায় করে থাকে, দেশের প্রচলিত আইনে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিতে পারত, আমরা জানতে পারতাম সে কী অপরাধ করেছে। কিন্তু এখন আমরা কিছুই জানি না।’
মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলির সভাপতিত্বে এবং মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসার পরিচালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন রহমাতুল্লাহর বড় খালা সায়রা খাতুনসহ স্বজনেরা।