রায়ে আমি হতাশ, সুপ্রিম কোর্টে আপিল করব : নাকানো এরিকো
জাপানি মা নাকানো এরিকো তার তিন মেয়েকে নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি এতে অত্যন্ত হতাশ। আজকের রায়ের বিরুদ্ধে আমরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করব, শুধু শিশুদের মঙ্গলের জন্য। এটি পেরেন্টাল শিশু অপহরণ, এটি শিশু নির্যাতন। শুধু তাই নয়, এটি পারিবারিক নির্যাতন।’
আজ মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মামনুন রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত আপিল আবেদন আংশিক মঞ্জুর করে এ রায় দেওয়ার পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন নাকানো এরিকো।
রায়ে বলা হয়, প্রথম ও তৃতীয় মেয়েকে নিয়ে জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো বাংলাদেশে বা যেকোনো দেশে বসবাস করতে পারবেন। তবে বাবা সন্তানদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করার সুযোগ পাবেন। একইভাবে দ্বিতীয় মেয়ে লাইলা লিনা বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবেন। তবে জাপানি মা দ্বিতীয় মেয়ের সঙ্গে দেখার সুযোগ পাবেন।
এ বিষয়ে জাপানি মা নাকানো এরিকো বলেন, ‘আমি গত তিন বছর ধরে বাংলাদেশে। আমি আমার চাকরি হারিয়েছি। আমি জাপানের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাজ করতাম। কিন্তু আমি আমার চাকরি হারিয়েছি। শুধু আমার মেয়েদের জন্য। এমনকি আমার আয় দিয়ে জীবনযাপন করতাম। ইমরান কখনোই অধিকারের জায়গা থেকে মেয়েদের জন্য কোনো একটি পেনিও (অর্থ) দেয়নি। আমি মেয়েদের পড়াশোনা, আবাসন, খাদ্যসহ সব ব্যয়ভার বহন করতাম, আমার নিজের কথা ভুলে গিয়ে। আমি আমার জীবন নিয়ে চিন্তা করতাম না। কিন্তু, এটা কি বাংলাদেশে স্বাভাবিক? আপনাদেরও (সাংবাদিক) সন্তান আছে। আপনারা কি সন্তানের পড়াশোনার খরচ দেন না? নাকি সন্তানের মা দেন! কিন্তু ইমরান কোনো খরচই দিত না। আমি এখানে কোনো ধরনের কাজ ছাড়া তিন বছর ধরে রয়েছি। এসব কী! এটা বাংলাদেশ থেকে কী ধরনের ট্রিটমেন্ট (আতিথেয়তা/আচরণ)। আমি কাজকে ভালোবাসি।’
নাকানো এরিকো আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা করেছে, দুই মেয়েকে বাংলাদেশে নিয়ে আসাটা ইমরানের অবৈধ, বেআইনি কাজ। কিন্তু ইমরান এখন হাইকোর্টের রায়ে এই কাজটা দীর্ঘদিন করতে পারবেন। আমি এতে অত্যন্ত হতাশ। আজকের রায়ের বিরুদ্ধে আমরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করব, শুধু শিশুদের মঙ্গলের জন্য।’
‘এটি পেরেন্টাল শিশু অপহরণ, এটি শিশু নির্যাতন। শুধু তাই নয়, এটি পারিবারিক নির্যাতন। জাপানে থাকা আমার পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাই আক্রান্ত হয়েছে। সবাই মানসিক আঘাতগ্রস্ত। এটি পারিবারিক নির্যাতন। গোপনে কারও সন্তানদের বাংলাদেশে নিয়ে এলে এটা তার এবং তার পরিবারের জন্য ট্র্যাজিডি, এটি জঘন্য। টোকিওর পারিবারিক আদালত সন্তানদের আমার সঙ্গে রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। কিন্তু আজ হাইকোর্ট তা সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছেন’, যোগ করেন জাপানি নারী নাকানো এরিকো।