‘মানুষ সবই জানে, দেশ এখন একজনের কাছে জিম্মি’
বিএনপিনেতাকর্মী ও জনগণের প্রতি ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার’ আহ্বান জানিয়েছেন সদ্য কারামুক্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। এটা কোনো দলের লড়াই নয়, এটা দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনার লড়াই। স্বাধীনতার পর আমরা যেভাবে জিতেছি, এ লড়াইয়ে আমাদের সেইভাবে জিততে হবে। এটা বিএনপির লড়াই নয়, বাংলাদেশের মানুষের লড়াই।’
বানানীতে নিজ বাসভবনে আজ শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আমীর খসরু এসব কথা বলেন। প্রায় সাড়ে তিন মাস কারাভোগের পর গতকাল বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্তি পান তিনি।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের সময় প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুরের ঘটনায় করা মামলায় বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা কারাগারে ছিলেন। সাক্ষাৎকারে শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠন হয়েছে, এ বিষয়ে এক প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) তো বলতেই পারে, তারা যে জায়গায় আছে, ক্ষমতায় আছে...। এটা তো সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ। ভোটাধিকার আদায়ে তারা কী করবে, এটা সময়ই বলে দেবে।’
আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, ‘দল, রাজনীতিবিদসহ সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে, এর চেয়ে বড় দুঃখ আর কিছু হতে পারে না। কেউ যদি এটা বলে, কাজ শেষ হয়ে গেছে, রাজনীতিতে সফলতা লাভ করছি। মানুষ কিন্তু সবই জানে, দেশ এখন একজনের কাছে জিম্মি।’ তিনি বলেন, ‘সরকার কতদিন ক্ষমতায় থাকবে কি থাকবে না, সব সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণ নেবে। এটা ঠিক, মানুষ তার ভোটাধিকার আদায় করে নেবে। গায়ের জোরে, নির্যাতন করে, গুম-খুন করে কতক্ষণ ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে, সেটা সময় বলবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আজ আছি, কাল থাকব না; মানুষের অধিকার আদায়ের বিষয়টা তো থাকবে। এটা চলতে থাকবে। অধিকার আদায়ের আন্দোলন চলে যাবে, তা নয়।’
‘আন্দোলনে বিএনপির কোনো স্বার্থ নেই, স্বার্থ হচ্ছে দেশের মানুষের’ উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘আন্দোলন কোনো দলের বিষয় না, এটা দেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার, এখানে আমরা (বিএনপি) মানুষের নাগরিক অধিকারের কথা বলেছি। মানুষের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হচ্ছে, বাড়িঘর ছাড়া হয়েছে, চাকরি হারিয়েছে। এ রকম ত্যাগ সাধারণ মানুষ করছে। সাধারণ মানুষের এমন ত্যাগ অনেক দিন, বহু বছর ধরে হয়নি। তারপরও মানুষ আশা ছাড়েনি, সরকার যা করছে, বলছে এগুলো জনগণ বিশ্বাস করছে না। সরকার বিশ্বাস যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে।’
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে পশ্চিমা বিশ্বের তৎপরতা ও নির্বাচন পরবর্তী তাদের ভূমিকা প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, ‘আপনার রাজনীতি আপনাকে করতে হবে। কারও ওপর নির্ভরশীল হয়ে নয়। তাদের সমর্থন তারা জনগণকে দেবে। এটা আর ভূ-রাজনীতি তো এক হতে পারে না। ভূ-রাজনীতি হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণকে নিয়ে আপনাকে রাজনীতি করতে হবে। কোনো একটি দেশ এসে তো আর ক্ষমতা দখল করে দেবে না। তারা তো আর যুদ্ধ করবে না! সম্পর্ক তো দেশের সঙ্গে দেশের হবে।’
নির্বাচন নিয়ে ভারত-চীন-রাশিয়া ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘কোনো দেশের নাম আমি উল্লেখ করতে চাই না। এটা বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে। সম্পর্ক তো একটা দেশের মানুষের সঙ্গে মানুষের হবে, রাষ্ট্রের হবে। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সেই সব দেশের মানুষের যে একটা সম্পর্ক আছে, সেটা বিবেচনায় নিতে হবে...। এর ব্যতিক্রম হলে যেকোনো দেশের মানুষের সঙ্গে সত্যিকার সম্পর্ক হতে পারে না। সম্পর্কটা হতে হবে নীতি-নৈতিকতা ওপর ভিত্তি করে। পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধের ওপর বাংলাদেশের মানুষের প্রীতি সম্মানবোধ থাকতে হবে। এটাকে উপেক্ষা করে যদি কেউ সম্পর্ক করতে চায়, এটা কৃত্রিম সম্পর্ক।
পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা প্রসঙ্গে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির এই চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘নতুন বলে কিছু নেই। আলোচনা চলমান প্রক্রিয়া। এটা তো এখন চলছে। এটা স্বাভাবিক, কারাগারে থাকার সময় তো আর আমার সঙ্গে আলোচনার সুযোগ হয়নি। আমাকে যেহেতু পার্টি একটা দায়িত্ব দিয়েছে। আমার যতদিন দায়িত্ব থাকবে, আমার সে কাজটা করে যেতে হবে।’
ভবিষ্যতে বিএনপি কীভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চায় প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, ‘পুলিশ মারবে বলে যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন হবে না, একটা কিন্তু নয়। এটা তো সারা দুনিয়া স্বাক্ষী পুলিশ মেরেছে, গুম করেছে, হত্যা করেছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে নিয়েছে। এরপরও অধিকার আদায়ে আন্দোলন থেমে যায়নি। জনগণের আন্দোলন চলতে থাকবে।’