আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচারবিভাগ আজ পদদলিত : সেলিমা রহমান
আজ থেকে সরকারের কাছে আমরা আর কোনো দাবি করব না, এমন মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, ‘জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে, এখন থেকে আমরা লড়াই করে বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্ত করব। এই লড়াই আমাদের চলছে, আন্দোলনও চলছে। আজকে কোথাও আইনের বিচার নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচারবিভাগ সম্পূর্ণ পদদলিত হয়েছে।’
আজ শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ সকল রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সেলিমা রহমান এ কথা বলেন।
বিএনপিনেত্রী সেলিমা রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আজ কথা বলতে পারে না, প্রতিবাদও করতে পারে না। আজকে মহান ভাষা দিবসে মাসেও তারা কোনো কথা বলতে পারছে না। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে কারাগারে গিয়েছেন বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী। তারা এখনো কারাগারে নির্যাতন-নিপীড়ন শিকার হচ্ছেন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তার প্রতিহিংসার কারণে সরকার তাকে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি করে রেখেছেন। শুধু তাই নয়, খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মারার ষড়যন্ত্র করেছেন। আজকে তিনি জীবন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। তবুও সরকারের কাছে মাথানত করেনি। গৃহবন্দি থাকার পরও দেশনেত্রী বলছেন, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে দেশের কোনো মানুষ ভোট দিতে যায়নি।’
ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্য বিএনপির এই সিনিয়র নেত্রী বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাসী দল নয়, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী দল। লাঠি-লগি-বৈঠা দিয়ে এরা মানুষ মারে, বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে আওয়ামী লীগের লোকজন। ছাত্রলীগের হাতে পিস্তল-লাঠি-দা তুলে দিয়েছে। তাই শিক্ষাঙ্গনে দেখা যায় একদিকে টেন্ডারবাজি চলছে, অন্যদিকে মারামারি। সারাদেশে খুন-গুম করে বেড়াচ্ছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডাররা।’
সেলিমা রহমান বলেন, ‘সামনে রমজান আসছে দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাধারণ জনগণের চিন্তিত। জিনিসপত্রের দাম আগুন ছোঁয়া। সরকার প্রতিদিন বলছে দাম কমাবে কিন্তু দাম কমবে না। এই সরকার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করবে না। কারণ এর সঙ্গে জড়িত সরকার দলীয় লোকজন।’ ছাত্রসমাজ, নারীসমাজসহ দেশবাসীকে রাজপথে নেমে আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান বক্তা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অধীনে বাংলাদেশ নিরাপদ নয়। ২০০৮ সালে দেশে কোনো নির্বাচন নয়, চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা বসানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা ছিল দেশকে রাজনৈতিক শূন্য করা, অর্থনীতিকে ধ্বংস করা। তারা দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যতদিন এই সরকার ক্ষমতায় আছে ততদিন দ্রব্যমূল্য কমবে না।’
আব্দুল আউয়াল মিন্টু আরও বলেন, ‘মিথ্যা কথা বলার জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলে এই সরকার নোবেল পুরস্কার পাবে। এই সরকার সাংবিধানিক অধিকার গণতান্ত্রিক অধিকার ও সামাজিক অধিকার ধ্বংস করছে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল নয়, এরা সন্ত্রাসী দল। আজকে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবহার করে দুবৃর্ত্তায়নে পরিণত করেছে। তাই স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে, মানুষের মুক্তি ও গণতন্ত্রের জন্য পুনরায় আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে। আওয়ামী দুর্বৃত্তায়ন থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।’
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের রহমাতুল্লাহ বলেন, শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। দেশনেত্রীকে ভয় পায় বলেই তাকে আটকে রাখা হয়েছে। শুধু খালেদা জিয়া নয়, বাংলাদেশের জনগণের ওপর প্রধানমন্ত্রীর অনেক বড় ক্ষোভ রয়েছে। নির্বাচনে ভোট না দেওয়ায় জনগণ তার প্রতিহিংসা শিকার হচ্ছে। তাই দ্রব্যমূল্য বাড়লেও তার কিছু আসে যায় না।
ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, ৭ জানুয়ারি ‘আমি’ ‘ডামি’ আর ‘স্বামী’ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সার্কাসের সরকার গঠন করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে শুধু বিএনপিসহ দেশের ১৮ কোটি মানুষ বর্জন করেনি, আ.লীগও শেখ হাসিনাকে বর্জন করেছে। শেখ হাসিনাকে দেশের জনগণ এখন আর বিশ্বাস করে না। আজকে আন্তর্জাতিক মহলও মনে করে, শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তার অধীনে দেশের স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব নিরাপদ নয়।
বিক্ষোভ সমাবেশটি আয়োজন করে বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলন। আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক ও কৃষক দলের সহ সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলম এবং সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মোফাজ্জল হোসেন হৃদয়ের সঞ্চালনায় আরও এতে বক্তব্য দেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, কৃষকদলের সহ-সভাপতি আ ন ম খলিলুর রহমান ভিপি ইব্রাহিম, তাঁতীদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ড. কাজী মনিরুজ্জামান মনির, যুগ্ম জাগপার মির আমীর হোসেন আমু, কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ আব্দুল্লাহ আল বাকী প্রমুখ।