দেশে বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে : রওশন এরশাদ
সাংবিধানিকভাবে দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ও সাবেক বিরোধী দলীয়নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অশনিসংকেত শোনা যাচ্ছে। সরকার যদি তা মোকাবিলা করতে না পারে- তাহলে দেশে বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
আজ শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের এক বর্ধিতসভায় সভাপতির বক্তব্যে রওশন এরশাদ এসব কথা বলেন। সভায় দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এতে ৩৯টি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন বলে আয়োজকরা জানান।
রওশন এরশাদ বলেন, পল্লীবন্ধুর নীতি-আদর্শ, তার চেতনা-প্রেরণা, তার ভাবমূর্তি হচ্ছে জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব। সেই অস্তিত্বকে যারা মুছে দিতে চায়-তারা জাতীয় পার্টির পরিচয় দেওয়ার অধিকার রাখে না।
পবিত্র মাহে রমজানের কথা উল্লেখ করে রওশন এরশাদ বলেন, দ্রব্যমূল্য এখনই সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। আর রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা ওঁৎ পেতে বসে আছে। এক্ষেত্রে সরকারের প্রধান কাজ হবে- দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
এসময় রওশন এরশাদ আক্ষেপ করে বলেন, এবারের নির্বাচনি ইশতেহারের মলাট থেকে পল্লীবন্ধুর ছবি মুছে ফেলা হয়েছে। জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠার পর এবার নির্বাচনে পার্টির প্রার্থীদের পোস্টারে পল্লীবন্ধুর ছবি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তাঁর নির্বাচনি পোস্টারে বঙ্গবন্ধুর ছবি রেখেছেন। অথচ জাতীর পার্টির সাবেক চেয়ারম্যানের পোস্টারে পল্লীবন্ধুর ছবি জায়গা পায়নি। এটা জাতীয় পার্টির অগণিত নেতা-কর্মীর মনে আঘাত দিয়েছে, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তারা ভোট কেন্দ্রে যাবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
গেলো নির্বাচনে কেনো তিনি অংশ নেননি তার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তৃণমূল নেতাকর্মীদের রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টির নিবেদিত প্রাণ অনেক নেতা-যাদের ভোটে জয়লাভের সম্ভাবনা ছিল-এমন সব প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এসব জনপ্রিয় ও যোগ্য নেতা এবং অভিভাবকহীন অসংখ্য নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের বিপদে রেখে আমি নির্বাচনে যেতে পারি না। আমার ছেলের আসন যদি কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে আমি কি নির্বাচনে যেতে পারি? নিশ্চয়ই না। তারপরও আমি সব কিছু মেনে নিতে পারতাম- যদি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভরাডুবি না হতো। জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের শেষ সীমানায় পৌছে দেওয়া হয়েছে। এটা আমি কীভাবে মেনে নেবো?
জাপার সাবেক এই প্রধান পৃষ্ঠপোষক বলেন, এই পরিস্থিতি থেকে পার্টিকে উদ্ধারের জন্য আপনারাই প্রথমে উদ্যোগ নিয়েছেন। দলের অগণিত নেতা-কর্মীদের একান্ত দাবির মুখে আমি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি। আজ আপনারা আমার দায়িত্ব গ্রহণকে অনুমোদন দিয়েছেন। আপনারাই জাতীয় পার্টির সকল ক্ষমতার উৎস। আপনারা যেভাবে চাইবেন-পার্টি সেভাবেই পরিচালিত হবে।
জাতীয় পার্টিতে পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক চর্চা হবে উল্লেখ করে রওশন এরশাদ বলেন, তার জন্য আগামী ৯ মার্চ জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হতে পারে। কোনো ষড়যন্ত্র, কোনো বিভ্রান্তিতে আপনারা কান দেবেন না। ৯ মার্চের সম্মেলন সফল করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলনের জন্য রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া গেছে। আপনারা সকাল দশটার মধ্যে প্রত্যেক কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের নিয়ে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হবেন। ওই দিন আপনারাই জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচিত করবেন।
জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, আজ আমার হৃদয় কানায় কানায় ভরে গেছে। আপনারা আমার ডাকে সারা দিয়ে সকল জেলা থেকে অল্প সময়ের মধ্যে এই বর্ধিত সভায় এসে যোগ দিয়েছেন। আপনারা প্রমাণ করেছেন পল্লীবন্ধু এরশাদের জাতীয় পার্টি হারিয়ে যায়নি, হারিয়ে যাবে না। আপনারা পার্টিকে আবার সুসংগঠিত করে পল্লীবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবেন।
রওশন এরশাদ বলেন, পল্লীবন্ধু স্বপ্ন দেখেছেন নতুন বাংলাদেশ গড়ার। তিনি স্বপ্ন দেখেছেন এদেশে প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের। তিনি চেয়েছিলেন, নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার করার। তিনি চেয়েছিলেন, পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে। তিনি চেয়েছিলেন, ৬৮ হাজার গ্রামকে বাঁচিয়ে গোটা বাংলাদেশকে বাঁচাতে। আপনারা কি পল্লীবন্ধুর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারবেন?
রওশন এরশাদ আরও বলেন, আপনাদের একটি কথা বলতে চাই- আজ আপনাদের পেয়ে আমার মনোবল দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। যতদিন বেঁচে আছি আপনাদের মাঝেই বেঁচে থাকতে চাই। পল্লীবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের সংগ্রামই হবে আমাদের সকলের পথ ও পাথেয়। আপনারা ভাল থাকুন। ৯ মার্চ জাতীয় সম্মেলন সফল করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।
এসময় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, রওশন এরশাদ অনুসারী জাপার মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সুনীল শুভ রায়, গোলাম সারোয়ার মিলন, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, কারি হাবিবুল্লাহ বেলালী, নুরুল ইসলাম মিলন, রফিকুল ইসলাম হাফিজ, এমএ গোফরান, ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মৃধা, কাশেম সরকার, নুরুল ইসলাম নুরু, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশিদ, আব্দুল গাফফার বিশ্বাস, শংকর পাল, কেন্দ্রীয় নেতা মাহমুদা রহমান মুন্নী, খন্দকার মাহতাব উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম শফিক, খোরশেদ আলম খুশু, ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল হক, ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের, শেখ মাসুকুর রহমান, এমএ সাত্তার, আমিনা হাসান, মোল্লা শওকত হোসেন বাবুল, অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান, মিজানুর রহমান প্রমুখ।