‘কেউ আমার ছেলেরে আইন্না দিতারবা? আমার ত সব শেষ’
রাজধানীর বেইলি রোড ট্র্যাজেডিতে সপরিবারে ছেলেকে হারিয়ে মা হেলেনা বেগম বিলাপ করে বলছেন, ‘আমার ছেলে বিদেশ যাইতে বিদায় নিতে আওয়ার কতা ছিল। অহন শেষ বিদায় নিয়া গেল। আমার ছেলেরে কেউ আইন্না দেও। কেউ আমার ছেলেরে আইন্না দিতারবা। আমার ত সব শেষ। ছেলে, বৌ, নাতি-নাতিন কেউ নাই। আমি অহন কেমনে বাঁচুম। তোমরা কেউ হেরারে আইন্না দেও।’
সপরিবারে নিহত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার ইতালি প্রবাসীর পরিবারে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের পাঁচ সদস্যই নিহত হয়েছেন। তাদের গ্রামের বাড়ি শাহবাজপুর ইউনিয়নের খন্দকারপাড়ায় সৈয়দবাড়ি।
নিহতরা হলেন উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের আবুল কাসেমের ছেলে ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউসার (৫০), তাঁর স্ত্রী স্বপ্না (৩৫), মেয়ে কাশফিয়া (১৭) ও নূর (১৩), ছেলে আব্দুল্লা (৭)। তারা রাজধানীর মধুবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
নিহত কাউসারের পরিবারের সদস্যরা জানান, কাউসার প্রথমে সিঙ্গাপুর প্রবাসী ছিলেন। প্রায় ২০ বছর আগে সে ইতালি পাড়ি দেন। এর মধ্যে তিনি দেশে আসা-যাওয়া করতেন। গত দেড় মাস আগে প্রায় দুই বছর পর ইতালি থেকে দেশে ফেরেন তিনি। তিনি স্ত্রী-সন্তানদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভিসা ও টিকেট সম্পন্ন করেছিলেন। আগামী ২০ মার্চ তাদের নিয়ে তিনি ইতালি ফেরার কথা ছিল। গতকাল রাতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে যান। সেখানে অগ্নিদগ্ধ হয়ে সপরিবারে নিহত হন তিনি। আজ বাদ আসর জানাজা শেষে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বেইলি রোডের একটি বহুতল ভবনে আগুন লাগে। এতে দগ্ধ হয়ে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়েছে অন্তত ২২ জন। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ৭৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে উদ্ধারকাজে সহায়তা করে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য, এনএসআই, বিজিবি ও র্যাব।