বাংলাদেশি ভ্যান চালকের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিলেন সৌদি বাদশাহ
৩৫ বছর ধরে ঝিনাইদহে নিজ গ্রামে ভ্যান চালিয়ে জীবনযাপন করেন আব্দুল সালাম মো. রমজান আলী। পবিত্র মক্কা ও মদিনা দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নানাভাবে চেষ্টাও করেছেন। অবশেষে বাংলাদেশি এই ভ্যানচালকের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করেছেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ। এজন্য সৌদি বাদশাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন আব্দুল সালাম।
জানা গেছে, ওমরাহ পালনের জন্য ৩৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে ৬ মার্চ মদিনায় যান সালাম। তিনি প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আজ শুক্রবার মদিনার মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ আদায় করেন।
ইউএনবি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, 'গেস্ট প্রোগ্রাম'র অধীনে ওমরাহ পালন ও প্রার্থনার জন্য ইসলামিক স্কলার্স, বুদ্ধিজীবী, প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকসহ বিশ্বের এক হাজার ইসলামি ব্যক্তিত্বকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে আছেন আব্দুল সালাম।
আব্দুস সালাম সৌদি আরবে তার আবাসস্থলে ইউএনবিকে বলেন, ‘আমি সরাসরি সামনে থেকে পবিত্র মক্কা ও মদিনা দেখতে চেয়েছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে আমি অনুরোধ করেছি এবং চেয়েছি তারা আমার অনুরোধ গ্রহণ করুক।’ তিনি সৌদি কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছেন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন, যাতে তার ইচ্ছা পূরণ হয়।
৫৪ বছর বয়সী সালাম বলেন, ‘আমাকে মক্কা ও মদিনা দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহ ও সৌদি বাদশাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
কয়েক বছর ধরে সরকারি কলেজের একটি মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করা আব্দুল সালামের রয়েছে আরও একটি স্বপ্ন। তিনি জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ পরিদর্শন করতে চান। তিনি বলেন, ‘অস্ত্র হাতে তুলে নিতে নয়, মানুষকে সাহায্য করতে চাই। আমি আল-আকসা মসজিদের ইমামকে কিছু উপহার দিতে চাই। আমি আমার সাধ্যমতো তাদের সাহায্য করতে চাই।’ তিনি বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে এবং মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
সালাম জানান, তিনি তার স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির কাছে একটি অনুরোধপত্র লিখেছিলেন।
কুবা মসজিদ, কিং ফাহাদ কমপ্লেক্স, শুহাদা ও উহুদ পাহাড়, নবীর জীবনী, ইসলামি সভ্যতার আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ও জাদুঘর পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল সোমবার ওমরাহ পালন করতে মক্কার উদ্দেশে মদিনা ত্যাগ করবে।
বাদশাহ সালমান ২০২৪ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এক হাজার ওমরাহ যাত্রীকে অতিথি হিসেবে অনুমোদন দেন।
পবিত্র দুই মসজিদের অতিথি প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে হজ, ওমরাহ ও সফরের এই আয়োজন দেশটির ইসলামবিষয়ক মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করছে। সৌদি বাদশাহ এবং ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানকে এই উদার উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন সৌদি আরবের ইসলামবিষয়কমন্ত্রী শেখ আব্দুল লতিফ আল-শেখ। তিনি বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ ইসলাম ও মুসলমানদের খেদমতের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করে। এ ছাড়া ইসলামবিষয়ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োজিতদের সঙ্গে ফলপ্রসূ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে।