শিশু নূরীর মা হাফসার জামিন স্থগিত করলেন চেম্বার আদালত
বিএনপির ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে নাশকতার মামলায় মানববন্ধনে কান্না করে আলোচনায় আসা শিশু নূরীর মা হাফসা আক্তারের জামিন স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। আজ রোববার (১০ মার্চ) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।
আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ৬ মার্চ নাশকতার মামলায় কারাগারে থাকা হাফসা আক্তারকে জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে সেদিন জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহিন আহমেদ খান।
২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতার মামলায় কারাগারে থাকা হাফসা আক্তারের জামিন চাইতে হাইকোর্টে আসে মায়ের মুক্তির জন্য মানববন্ধন করে আলোচনায় আসা চার বছরের শিশু নুরজাহান নূরী।
গত ৪ মার্চ বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে তার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হয়। গত বছরের ২৩ নভেম্বর পত্রিকায় ‘নূরীর কান্নার জবাব নাই’প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কেউ এসেছেন কোলের শিশু নিয়ে, কেউ এসেছেন অবুঝ সন্তান নিয়ে, আবার কেউ নাতি-নাতনি নিয়ে। বৃদ্ধ বাবা, মা, স্ত্রী, ভাই-বোনরাও এসেছেন। তাদের কারও চোখে পানি, কারও হাতে প্ল্যাকার্ড, কারও হাতে ব্যানার। তারা সবাই বিরোধী রাজনৈতিক দলের ‘নির্যাতিত’ নেতাকর্মীদের স্বজন। বিএনপির এসব নেতাদের মধ্যে কেউ শিকার হয়েছেন গুম-খুনের, কেউ বা আছেন কারাগারে। গতকাল প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে স্বজনদের মুক্তি দাবি করেছেন তারা।
রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে দাদা-দাদির হাত ধরে আসে দুই অবুঝ শিশু বর্ষা ও নূরী। মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে কারাবন্দি মায়ের জন্য মুক্তি দাবি করে এই দুই কন্যাশিশু। শিশু বর্ষা মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলে, আমার মাকে ছেড়ে দেন। আমার পরীক্ষা। আমি মাকে ছাড়া স্কুলে যেতে পারি না।
এসময় পাশে থাকা বৃদ্ধ দাদি বলেন, আমার ছেলে আবদুল হামিদকে না পেয়ে পুত্রবধূ পুতুলকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। তার নামে তো কোনো মামলা নেই।
আমার পুরো পরিবার বিএনপি করে, এটাই অপরাধ। চারদিন ধরে আমার বউমার সঙ্গে দেখাও করতে পারছি না। দুটি দুধের শিশুকে আমি সামলাতে পারি না। সারারাত ঘুমাতে পারি না। বোন ও দাদি যখন কথা বলছিলেন তখন অঝোর ধারায় কাঁদছিল ছোট্ট শিশু নূরী। তার কান্নার জবাব দেওয়ার ভাষা ছিল না কারও। তিন ছেলের গ্রেপ্তারের বর্ণনা দিয়ে বাবা আব্দুল হাই বলেন, আমার তিন সন্তানকে কারান্তরীণ করা হয়েছে। এক ছেলেকে ১০ বছর সাজা দেওয়া হয়েছে। বড় ছেলেকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে পুত্রবধূকে তিনদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে পুলিশ। অথচ আমার ছেলের বউ রাজনীতিতে জড়িত নন। বিএনপি করা কি আমাদের অপরাধ? আমরা শুধু সুষ্ঠু ভোটের অধিকার চেয়েছি।
বাবা বিএনপির কর্মী আবদুল হামিদ ভূঁইয়া পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মা হাফসা আক্তার নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। মা-বাবার জন্য কাঁদছে শিশু নূরজাহান আক্তার নূরী।