আওয়ামী অলিগার্করা গরিবের পকেট কেটে ফুলে ফেঁপে বড়লোক হচ্ছে : ১২ দল
১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা জবরদখলকারী আওয়ামী লীগ সরকার আওয়ামী অলিগার্কতন্ত্র কায়েম করেছে। দেশের সাধারণ মানুষের পকেট কেটে আওয়ামী লীগের লোকজন রাশান অলিগার্কদের মত বিত্ত বৈভবের মালিক হচ্ছেন। রাতারাতি ফুলে-ফেঁপে বড়লোক হচ্ছেন। অন্যদিকে তাদের লুটেরা সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্য লাগামহীন বাড়ছে আর সাধারণ মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।
আজ রোববার (১০ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর মালিবাগে মৌচাক, আনারকলি মার্কেট ও সংলগ্ন এলাকায় "ভারতীয় পণ্য বর্জন ও আগ্রাসন প্রতিরোধে রুখে দাঁড়ান" শীর্ষক লিফলেট বিতরণকালে জোটের শীর্ষ নেতারা এসব কথা বলেন। এসময় তারা মার্কেটের দোকানদার, ক্রেতা, পথচারী ও সাধারণ মানুষের হাতে লিফলেট তুলে দেন।
লিফলেট বিতরণের সময় ১২ দলের নেতারা আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশের ইন্ধনে আওয়ামী লীগ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের কারণে তাদের পণ্য বর্জনের মাধ্যমে দেশের জনগণ তাদেরকে ঘৃণা জানাচ্ছে। এমতাবস্থায় দেশ ও জনগণের স্বার্থে অবিলম্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে হবে। একইসঙ্গে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎসহ নিত্যপণ্যের বর্ধিতমূল্য প্রত্যাহার এবং প্রতিবেশী দেশের পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান ১২ দলের শীর্ষ নেতারা।
১২ দলের লিফলেটে বলা হয়েছে- আওয়ামী লীগ সরকার গায়ের জোরে ভোট চুরির মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করে আসছে। তারা লুটপাট করতেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়িয়েছে। এই সিন্ডিকেট সরকারকে না বলুন। একইসঙ্গে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে প্রতিবেশী দেশের পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হয়।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার নেই। প্রহসন ও একদলীয় ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতা জবরদখল করেছে। অথচ একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক, সাম্য ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আমরা আজও গণতন্ত্রের স্বাদ পাইনি। জনগণ ভোটাধিকার বঞ্চিত। লুটপাট ও মহাদুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছে আওয়ামী লীগ। তাদেরকে নির্লজ্জভাবে মদদ দিচ্ছে প্রতিবেশী দেশের সরকার। আমরা ওই দেশকে বলবো- আপনারা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নয়। তা না হলে আপনাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপী বয়কটের ঘোষণা আসবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমনিতেই দেশের মানুষ ঠিকমতো দুই বেলা পেট ভরে খেতে পারে না। নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এরমধ্যেই বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে ডামি নির্বাচনের সরকার। এতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। আমরা বলবো- রোজার মাস শুরু হচ্ছে অবিলম্বে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমান। না হলে গণআন্দোলনের মুখে আপনাদেরকে লজ্জাজনকভাবে বিদায় নিতে হবে।’ এসময় অবিলম্বে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ গ্রেপ্তারকৃত সকল নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি জানান সেলিম।
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘প্রতিবেশী পাল্টানো যায় না বন্ধু পাল্টানো যায়। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ আমাদেরকে মেক্সিকো সিনড্রোমের মতো তাচ্ছিল্য করছে। কিন্তু তারা এদেশের জনগণের পালস বুঝতে চাচ্ছে না। তারা একটি ডিনায়ালের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেশী দেশের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ এদেশের সেকুলার, ধর্মে অবিশ্বাসী থেকে শুরু করে সকলের মধ্যে তীব্রভাবে দানা বেঁধে উঠেছে। কারণ তারা আমাদেরকে চাকর বা দাস বানিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে চাচ্ছে। আর এই সরকার সেটার সুযোগ করে দিচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ প্রকাশ্যে আমাদের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। আর তার দোসর এই সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন ২০১৪-১৮ এবং ২৪ সালে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় ভারত আমাদের পাশে ছিল এবং গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছে। আওয়ামী লীগের কিছু হালুয়া রুটি ও উচ্ছিষ্ট ভোগকারী ছাড়া দেশের সকল গণতন্ত্রকামী মানুষ আজ প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। তারা ও এই সরকার ভয় দেখিয়ে এদেশের জনগণকে দাবিয়ে রাখতে চাচ্ছে। ভয় দেখিয়ে দাবিয়ে রাখা যাবে না তাদেরকে চরম মূল্য দিতে হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস ও দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রতিবেশী দেশের হস্তক্ষেপ বন্ধে এদেশের ৫৬ হাজার বর্গ মাইলে তাদের পণ্য বর্জন আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া হবে। আশা করি প্রতিবেশী দেশের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং তারা এদেশের জনগণের অধিকার আদায়ে বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করবে। বন্ধুত্ব হবে সমতার ভিত্তিতে ভয় দেখিয়ে এদেশের জনগণকে দাবিয়ে রাখা যাবে না।’
লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, বাংলাদেশ এলডিপির অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটু, জাগপার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন প্রধান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবু হানিফ, বাংলাদেশ জাতীয় দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল আহাদ, জামিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি জাকির হোসেন, ইসলামী ঐক্য জোটের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা শওকত আমিন, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান হান্নান আহমেদ বাবলু, লেবার পার্টির যুগ্ম মহাসচিব শরিফুল ইসলামসহ জোট নেতৃবৃন্দ।