চাকরির প্রলোভনে আটকে রেখে নির্যাতন : উদ্ধার ২৭, গ্রেপ্তার ১৪
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে চাকরি প্রার্থীদের কৌশলে এক নিরাপত্তা এজেন্সির অফিসে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে নারীসহ প্রতারক চক্রের ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ১-এর সদস্যরা। এ সময় তাদের টর্চার সেল থেকে চাকরিপ্রার্থী ২৭ নারী-পুরুষকে উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার দিনগত রাতে গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন বোর্ড বাজারের শরিফপুর এলাকায় বেস্ট অ্যাকশন সিকিউরিটি কোম্পানির অস্থায়ী কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ওই প্রতারকদের গ্রেপ্তার এবং জিম্মিদের উদ্ধার করা হয়।
র্যাব ১-এর সদস্যরা ওই এজেন্সির টর্চার সেল থেকে ইলেক্ট্রিক শক দেওয়ার ক্যাবল ও লাঠিসোঁটাসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করেছেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার আস্তাকুল আমিন আনাম (৩০), একই জেলা সদর উপজেলার তৌফিক (২৪), রাজশাহীর বাঘমারা উপজেলার ইমরান হোসেন (১৯), নাটোরের সিংড়া উপজেলার জুনায়েদ (২১), ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার রনি আহমেদ (২১), একই উপজেলার সালাউদ্দিন সরকার (২০), পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার জিসান হোসেন (২১), কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার রায়হান (১৮), চাপাইনবাবগঞ্জের আতিক হাসান (১৯), ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আজিজুল হাকিম (২৩), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুর উপজেলার সম্পা আক্তার (২৪), শেরপুর জেলা সদরের বিউটি খাতুন (২১), যশোর কোতোয়ালী থানার বর্ষা খাতুন (১৯) এবং বরিশাল সদরের তাহসিন আক্তার (২০)।
র্যাব ১-এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মাহফুজুর রহমান জানান, বেস্ট অ্যাকশন সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান লোভনীয় সুবিধা দেওয়ার কথা বলে সিকিউরিটি গার্ড পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়। অনলাইনে ওই চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব হোসেন ও তার পূর্বপরিচিত এক তরুণী ফারজানা আক্তার পাখি গত ১৯ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির গাজীপুর মহানগরীর বোর্ড বাজারের শরিফপুরের অস্থায়ী কার্যালয়ে যান। অফিসে গেলে সাকিব ও ফারজানাকে আটক করে শারীরিক নির্যাতন করে কোম্পানির লোকজন। তাঁরা নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ধারণ করে সাকিবের বাবার মুঠোফোনে পাঠিয়ে মোবাইল ফোনে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তাদের দাবি করা টাকা না দিলে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করার হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সাকিবের বাবা ছেলেকে উদ্ধারের জন্য গতকাল বুধবার গাজীপুর র্যাব-১ পোড়াবাড়ী ক্যাম্পে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে সাকিবসহ জিম্মি ২৭ চাকরি প্রার্থীকে ওই কোম্পানির কার্যালয় থেকে উদ্ধার করে। এ সময় ইলেক্ট্রিক শক দেওয়ার ক্যাবল ও লাঠিসোটাসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়। এ সময় ঘটনার মূলহোতাসহ ১৪ প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়।
মাহফুজুর রহমান আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের সদস্য। এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সময়ে বেস্ট অ্যাকশন সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড এবং তাদের ব্যবহৃত একাধিক মোবাইল ফোন নম্বরের মাধ্যমে অনলাইনে ভুয়া চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রায় তিন মাস ধরে তারা গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন রশিদ মার্কেট এলাকায় ভাড়া বাসা নিয়ে সেখানে অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। তবে তারা প্রায়ই আত্মগোপনের জন্য নিজেদের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ রেখে আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের বাসায় অবস্থান করত বলে গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা ২৭ জনকে পেয়েছি, যাদের সঙ্গে প্রতারকচক্রের সদস্যরা একইভাবে প্রতারণা করেছে। চক্রের সদস্যরা চাকরিপ্রার্থী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাকিবকে নির্যাতন করে সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা করেছিল। তাদের অফিস থেকে পাঁচ শতাধিক মানুষের চাকরির আবেদন ফরম পূরণ করা অবস্থায় পেয়েছি। চক্রের সদস্যরা ওই সব ফরম পূরণ বাবদ প্রত্যেকের কাছ থেকে ন্যূনতম ৬০০ টাকা করে নিয়েছে। পরবর্তী সময়ে মার্কেটিং কর্মকর্তা ও নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১৫ হাজার টাকা করে নিত। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।