পাকিস্তানি কায়দায় ভারতের বিরোধিতা করছে বিএনপি : ওবায়দুল কাদের
রাজনৈতিক কোনো ইস্যু না পেয়ে পাকিস্তানি কায়দায় বিএনপি ভারতের বিরোধিতা শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আজ শনিবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ইফতারসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এদিন ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকে বিএনপি আবারও চিরাচরিত পাকিস্তানি কায়দায় অপপ্রচার শুরু করেছে। পাকিস্তান আমল থেকেই আমরা এই অপপ্রচার শুনছি। যখন কোনো রাজনৈতিক ইস্যু থাকে না, তখন এই একটাই ইস্যু আওয়ামী লীগ বিরোধীরা নিয়ে আসে, সেটা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে, এখন আবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এখন আবার তারা ভারত বিরোধিতার ইস্যু, ভারত বিদ্বেষের ইস্যু নিয়ে অপপ্রচার করছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এখানে ইন্ডিয়ার কী আছে? বাংলাদেশের জনগণ ভোট দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করেছে। যেখানে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট নির্বাচনে পড়েছে, অনেক উন্নত দেশেও এই পরিমাণ ভোট পড়ে না। তারপরও বলে এখানে ইন্ডিয়া আমাদের নির্বাচিত করে। কোথায় ইন্ডিয়া? ভোটকেন্দ্রে আমাদের জনগণ, আমাদের ভোটাররা ভোট দেয়। ইন্ডিয়াসহ বন্ধুদেশ যারা আছে, তারা দেশে-বিদেশে নির্বাচন বানচালের যে ষড়যন্ত্রের যে চেষ্টা হয়েছিল, তখন আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল, এটাই সত্য। তারা আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেনি। আমাদের নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করার সময় ইন্ডিয়া আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল।’
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ক্ষমতা ছাড়া বিএনপি টিকবে না। এটা ক্ষমতার দল। নিজেদের পকেটের উন্নয়নের দল। জনগণের ভাগ্যন্নোয়নের দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা। বিএনপি হচ্ছে নিজেদের ক্ষমতা আর পকেটের দল। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় নেই, বড় কষ্টে আছে। ক্ষমতায় না থাকায় লুটেপুটে খেয়ে হাওয়া ভবন করার সুযোগ নেই। হাওয়া ভবন ছাড়া বিএনপি টিকবে না। কারণ এই দল ক্ষমতাকেন্দ্রিক দল, মানুষের দল নয়। জনগণের দল আওয়ামী লীগ, ক্ষমতার দল বিএনপি—এই হলো পার্থক্য।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি ইফতার পার্টি করে আর আওয়ামী লীগ ইফতার সামগ্রী বিতরণ করে। তারা ইফতার খাওয়ার পার্টি করে, আমরা ইফতার দেওয়ার পার্টি করি, এই হলো আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির পার্থক্য। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা ঢাকা সিটিতে ছড়িয়ে দিতে হবে। সাধারণ মানুষের মাঝে এই ইফতার সামগ্রী বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘শুনেছি বিএনপির মহাসচিব সিঙ্গাপুরে, আবার প্রতিদিনই তার একটা বিবৃতি দেখি। আমি অবাক হই, কোনো একটি দলের সেক্রেটারি জেনারেল নেতৃত্ব বিদেশে গিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলে! অনেকবার চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুর গিয়েছি, কিন্তু আমি কোনোদিনও কোনো বিবৃতি বা বক্তব্য বিদেশ থেকে দেয়নি। এটা নিয়ম না।’
বিএনপি মহাসচিবসহ দলটির নেতাদের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘তিনি (মির্জা ফখরুল) প্রতিদিনই দমন-নিপীড়ন একটাই ভাষা ব্যবহার করছেন। একে একে বিএনপির সব নেতাই জেল থেকে বেরিয়েছে। নতুন করে দমন-নিপীড়ন কোথা থেকে হচ্ছে? এখন মির্জা ফখরুল সিঙ্গাপুরে বসে দেশের দমন-নিপীড়নের খবর দিচ্ছে। অবাক করা এই দল! এক নেতা বলে, ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে পেছনে সহযোগিতা করেছে। আরেকজন বলে, ভারতীয় পণ্য বর্জন করতে হবে। দুই ধরনের কথা। এই দলের এখন নেতায় নেতায় মতের কোনো মিল নেই। হাফিজ বলে এক কথা, মঈন খান বলে এক কথা, রিজভী বলে আরেক কথা, আবার সিঙ্গাপুর থেকে ফখরুল বলে আরেক কথা। এই হচ্ছে একটা দলের অবস্থা।’
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সারা দেশে মানুষের কিছুটা কষ্ট আছে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায়। ইদানিং বেশ কিছু পণ্যে দাম কমতে শুরু করেছে। জিনিসপত্রের দাম আরও কমবে এবং সাধারণ মানুষের কাছে সহনীয় থাকবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজির আহমেদ ও সঞ্চালনা করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, জাতীয় কমটির সদস্য আব্দুল বাতেন, সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান, মিজানুর রহমান, নাসিরউদ্দিন দিলু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী ইকবাল, সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমা আক্তার লাবণ্য, শাকুর হোসেন, হাবিবুর রহমান হাবিব, দপ্তর সম্পাদক আরমান হোসেন, উপদপ্তর নাদিম ও দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেনসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা।