সাংবাদিক সাব্বিরের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি
সময়ের আলোর স্টাফ রিপোর্টার সাব্বির আহমেদের ওপর নৃশংস হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। অন্যথায় কঠিন কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
আজ রোববার (২৪ মার্চ) দুপুরে সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে সাব্বিরের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন করে ঢাকাস্থ গাজীপুর সাংবাদিক ফোরাম। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে সহকর্মী সাংবাদিকরা এ দাবি জানান।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, সাংবাদিকরা কারও প্রতিপক্ষ নয়। তারা অন্যায়-অসঙ্গতি তুলে ধরেন। আর এসব তুলে ধরতে গিয়ে সারাদেশে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। অথচ কোনো হামলারই বিচার হচ্ছে না। যার কারণে এসব হামলার ঘটনা ঘটেই চলছে। অবিলম্বে সাব্বিরসহ সাংবাদিকদের ওপর হওয়া সকল হামলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা বলেন, সন্ত্রাসীরা দলের ছত্রছায়ায় থেকে এ ধরনের কাজ করছে। দলীয় পরিচয় না থাকলে এভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো যেত না। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে নিউজ করায় সাব্বিরকে হত্যার উদ্দেশে তার ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। এটা পূর্বপরিকল্পিত। ছাত্রলীগের কমপক্ষে ১৫ জন নেতাকর্মী এই হামলায় অংশ নেয়। মাত্র একজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে তিতুমীর কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় আরও কঠিন কর্মসূচি দেওয়া হবে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্রলীগ দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কলেজ প্রশাসন ও জড়িতদের বিরুদ্ধে আরও বেশি করে নিউজ করতে হবে। তাদের মুখোশ খুলে দিতে হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, সন্ত্রাসীরা দলের ছত্রছায়ায় থেকেই এ ধরনের কার্যক্রম চালায়। দলীয় পরিচয় না থাকলে সাব্বিরের ওপর হামলার ঘটনায় একজনকে কেন লোক দেখানো বহিষ্কার করা হয়েছে। সাব্বিরের ওপর হামলা করেছে ১৫–২০ জন। তাদেরকে সবাই চিনে। এদেরকে দ্রুত কলেজ থেকে বহিষ্কার করতে হবে, গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
এসময় তিনি সাগর–রুনীসহ সকল সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার দাবি করেন। সেই সঙ্গে সকল ঘটনা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম বলেন, ছাত্রলীগের ভর্তি বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজির নিউজ করায় টেন্ডার সাব্বিবের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। সাগর রুনি বিচার হয়নি, বিচার হলে সাব্বিরের উপর হামলা হতো না। অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার ও বিচার না করলে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন বলেন, হামলাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল সাব্বিরকে মেরে ফেলা। হামলাকারীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। একের পর এক সাংবাদিকের ওপর হামলা হচ্ছে, মেরে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু বিচার হচ্ছে না। সেজন্যই হামলা হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। এ জন্য সরকার ও প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে।
মহি উদ্দিন বলেন, সাব্বিরের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হলে এখনো হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। অন্য পেশার লোকজনের ওপর সেভাবে হামলা না হলেও সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক আক্রমণ করা হচ্ছে। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার বিচার হয়নি। একটা বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠায় হামলা বেড়েছে। ওই ঘটনায় অন্তরালের বিষয়টিও সামনে আনতে হবে।
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আতাউর রহমান বলেন, তিতুমীর কলেজের ছাত্রলীগের যেসব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাব্বিরের ওপর নৃশংস হামলার কারণে মামলা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জিএম ফয়সাল আলম বলেন, হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ধরে ধরে রিপোর্ট করতে হবে। তারা চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। আর সাব্বিরের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করলে কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হকের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বিএফইউজের একাংশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বাছির জামাল, ডিইউজের সহসভাপতি রফিক মোহাম্মদ, ডিআরইউর দপ্তর সম্পাদক রফিক রাফি, নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল খান, রিপোর্টার্স এগেইনস্ট করাপশনের (র্যাক) সাবেক সভাপতি ফয়েজ আহমেদ, ডিআরইউর সাবেক সহসভাপতি দীপু সারোয়ার, মাহমুদুল হাসান, ঢাকাস্থ গাজীপুর সাংবাদিক ফোরামের দপ্তর সম্পাদক এসএম নূর মোহাম্মদ, ডিআরইউর সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ, নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সহ সভাপতি রাশেদ আহমেদ, তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি তাওসিফ মাইমুন, দৈনিক সময়ের আলোর সিনিয়র রিপোর্টার সমীরণ রায় প্রমুখ।