চুরি যাওয়া মোবাইলফোনের আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রি, আটক ২০
মুঠোফোন চুরি করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আইএমইআই পরিবর্তন করে ফেলত সংঘবদ্ধ চক্রটি। এরপর রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটের সামনে টেবিল পেতে ও ঝুঁড়িতে করে বিক্রি করতো। মানভেদে ফোনগুলো বিক্রি হতো ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ঈদ সামনে এ চক্র আরও তৎপর হয়ে ওঠে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে অবৈধ মোবাইল চোরাকারবারি চক্রের হোতাসহ ২০ জনকে আটক করেছে র্যাব-৩। আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে আইএমইআই পরিবর্তন করার ডিভাইসসহ প্রায় ৯০০টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দেশি ও বিদেশি স্মার্টফোন জব্দ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
আটক ব্যক্তিরা হলেন- চক্রের হোতা হাফিজুর রহমান, তার সহযোগী রনি আহমেদ ইমন, মো. জসিম উদ্দিন, মো, জামাল উদ্দিন, আবুল মাতুব্বর, আহম্মদ আলী, মো. কামাল, মো. বাপ্পি, মো. আবিদ হোসেন সনু, মো. রবিন ভূইয়া, নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও এলাকার চোরাকারবারি চক্রের হোতা আরিফুল হোসেন, ইব্রাহিম মিয়া, মো. সুজন গুলিস্তান এলাকার চোরাকারবারি চক্রের হোতা মো. দেলোয়ার, মো. আব্দুর রহমান, মো. রাজু, মো. জিহাদ হোসেন, মো. মুনাইম, মো. রাজু, মো. রফিক।
খন্দকার আল মঈন বলেন, এ চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে চোরাই ও ছিনতাইকৃত বিভিন্ন আধুনিক মডেলের এনড্রয়েড মুঠোফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। পরবর্তীতে এসব মোবাইলফোন বিভিন্ন অপরাধীরা ক্রয় করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে মুঠোফোন চোর সিন্ডিকেট চক্র ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মোবাইলফোন কেনাবেচার বাণিজ্য নিয়ে তৎপর রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার রাতে র্যাব-৩ এর কয়েকটি দল রাজধানীর গুলিস্তান, শনির আখড়া, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে খিলগাঁও এলাকার সংঘবদ্ধ মোবাইলফোন চোরাকারবারি চক্রের হোতাকে আটক এবং ৫৪২টি স্মার্ট ফোন, ৩৪১টি বাটন ফোন, বিপুল ভুয়া আইএমইআই স্টিকার, একটি হিটগান, ইলেকট্রনিক সেন্সর ডিভাইস, আইএমইআই পরিবর্তনের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন টুলস, ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত ৬টি চাকু, একটি ল্যাপটপ, একটি এলসিডি মনিটর ও ১১ হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা মোবাইলফোন চোরাকারবারি চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে বলে জানান খন্দকার মঈন। তিনি বলেন, তারা মূলত চারটি চক্রে বিভক্ত হয়ে ৫-৬ বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মুঠোফোন ছিনতাই করে থাকে। আটক আব্দুর রহমান, রবিন ভুইয়া ও হাফিজুর রহমান মোবাইলফোন ছিনতাই করে পরে চক্রের রাজু, সুজন ও আবুল মাতুব্বরসহ অন্যদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে দেয়। দেলোয়ার ও আবুল মাতুব্বর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনগুলোর আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে।
খন্দকার মঈন আরও বলেন, আটককৃত দেলোয়ারের নেতৃত্বাধীন চক্রটি গুলিস্তান এলাকায় সক্রিয়। এ চক্রের কাছ থেকে ২৯১টি স্মার্ট ফোন এবং ১৭৯টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়। আটক আরিফুলের নেতৃত্বাধীন চক্রটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকায় সক্রিয়। এ চক্রের কাছ থেকে ১০৬টি স্মার্ট ফোন ও ৫৯টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়। আটক আবুল মাতুব্বরের নেতৃত্বাধীন চক্রটি মোহাম্মদপুর এলাকায় সক্রিয়। এ চক্রের কাছ থেকে ৯১টি স্মার্ট ফোন ও ২৪টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়। আটক ইমনের নেতৃত্বাধীন চক্রটি খিলগাঁও এলাকায় সক্রিয়। এ চক্রের কাছ থেকে ৫৪টি স্মার্ট ফোন ও ৭৯টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, চুরি ও ছিনতাইকৃত মোবাইলফোন বিক্রির সময় তারা ক্রেতাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে আইএমইআই পরিবর্তনের নিশ্চয়তা প্রদান করে। পাশাপাশি তারা মোবাইলফোনের কেসিন, ডিসপ্লেও পরিবর্তন করে ফেলে। আটক সবাই চোরাই মোবাইলফোনের পরিবর্তিত আইএমইআই নম্বরের ফোন সেট ব্যবহার করে থাকে। এই চক্র ২০ হাজারের বেশি মোবাইলফোনের আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রি করেছে বলে জানায়। ব্র্যান্ড ও কোয়ালিটি ভেদে এসব মোবাইলফোনের দাম ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভালো মানের মোবাইলফোনগুলো তারা মোবাইলফোন মেরামত করার দোকানে বিক্রি করে থাকে। অন্যান্য মোবাইলফোন বিভিন্ন মার্কেটের সামনে ভ্রাম্যমাণ টেবিলে করে বিক্রয় করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এসব ফোন বিভিন্ন অপরাধীরা ক্রয় করে বিভিন্ন গুরুতর অপরাধকর্মে ব্যবহার করে পরে ফেলে দেয়।
খন্দকার আল মঈন জানান, আটক দেলোয়ারের বিরুদ্ধে রাজধানীর বংশাল, শাহবাগ ও কুমিল্লার দেবীদ্বার থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। দেলোয়ারের সহযোগী রাজু ও জিহাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া আটক অপর হোতা আরিফুলের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানায় মামলা রয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে মোনায়েম, রফিক ও আরিফুল ইতোপূর্বে র্যাবের হাতে আটক হয় এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে পরবর্তীতে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও আগের পেশায় লিপ্ত হয়। আটক ২০ জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।