দিনাজপুরে বিলুপ্তির পথে তাঁত শিল্প
দিনাজপুরে ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে গেছেন। আবার যাঁরা এই পেশায় রয়েছেন তাঁরা কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই শিল্পটি ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
জানা গেছে, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার রানীর বন্দরে ২০০০ সালের দিকে সাত থেকে আট হাজার তাঁত শ্রমিক ছিলেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাঁতিরা শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা গ্রামীণ চেকসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড় বুনতেন।
তাঁত শ্রমিকদের খুটখাট খুটখাট শব্দে রাত দিন মুখরিত থাকত রানীর বন্দর। এখন রানীর বন্দরে তাত শ্রমিকদের সেই দিন নেই। এখন শুধুই অতীত। অনেকটা স্বপ্ন দেখার মতো। এখন তাঁত শ্রমিকদের দুর্দিন চলছে, অনেকে আবার পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে গেছেন।
বর্তমানে রানীর বন্দরে চারটি কারখানায় ৫০ জন তাঁতি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। চার তাঁতমালিক কষ্ট করে হলেও বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছেন।
কয়েকজন তাঁত শ্রমিক জানালেন, জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে তাঁরা তাঁতের কাজ করে চলেছেন।
তাঁত শ্রমিক ফজলুল করিম আলম জানান, দুর্মূল্যের বাজারে তাঁত থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনোভাবে সংসার চলছে তাঁদের। পেশা ছেড়ে দেওয়ায় বর্তমানে তাঁত শিল্পে অভিজ্ঞ শ্রমিকের খুব সংকট রয়েছে।
আব্দুল মালেক নামে এক তাঁতমালিক জানান, আধুনিক যুগে তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা খুব কঠিন।
জহুরুল হক নামে অপর এক তাঁতমালিক জানালেন, তাঁর বাবা মৃত মোহাম্মদ আলী এ পেশায় ছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি এই শিল্পের হাত ধরেন। কিন্তু এ পেশায় লাভ কম, তাই টিকে থাকা অনেকটা মুশকিল। তাঁর তাঁত শিল্পে ৩৫ থেকে ৪০ জন তাঁত শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এভাবেই বাকি জীবনটা চলার প্রত্যাশা করেন তিনি। তাদের উৎপাদিত শাড়ি লুঙ্গি গামছা গ্রামীন চেক, ডাইনিং মেটসহ সব ধরনের কাপড়ের দাম বাড়লেও সুতা, রংসহ কাঁচামালের দাম বাড়ায় তাঁর কপালে চিন্তার ভাঁজ।
দিনাজপুরের এসব শাড়ি, লুঙ্গি নিজ জেলাসহ ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, নওগাঁ, রাজশাহী ও ঢাকায় বাজারজাত করা হয়।
জহুরুল হক আরও জানান, বর্তমানে ডিজিটাল লেজার প্রিন্টের দাপটে ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প বিলুপ্তির পথে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড দিনাজপুরের লিয়াজোঁ অফিসার আমিনুল ইসলাম জানান, সরকার তাঁতিদের উন্নয়নে ২০১৯ সালে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে তাঁত শিল্পকে বাঁচাতে সরকার ঋণ দিয়ে যাচ্ছে।