সোনালী ব্যাংক রুমা শাখার ভল্ট অক্ষত
বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকের ভল্টে থাকা এক কোটি ৫৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ভল্ট খুলতে না পারায় কোনো টাকাই লুট করতে পারেনি লুটেরা বাহিনী। আজ বুধবার (৩ এপ্রিল) প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ভল্ট খুলে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।
সোনালী ব্যাংক বান্দরবান জেলা কার্যালয়ের ডেপুটি ম্যানেজার মো. ওসমান গনি জানান, ভল্ট খুলতে না পারায় ব্যাংকের কোনো টাকাই লুটেরা নিতে পারেনি। ভল্ট খুলে সব টাকাই সুরক্ষিত পাওয়া গেছে। তবে থানচি সোনালী ব্যাংকের শাখা থেকে ১৫ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় নিরাপত্তা বিবোচনায় বান্দরবান জেলা সদর ব্যতিত ছয়টি উপজেলায় ব্যাংকিং কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।
ব্যাংক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট ও ব্যাংক ম্যানেজার অপহরণের ঘটনায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা ৭টা) কোনো মামলা হয়নি। তবে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারের মুক্তিপণ বাবদ পরিবারের কাছে মোবাইল ফোনে ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারের স্ত্রী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা মাইছুরা ইশফাত কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
পরিদর্শনকালে বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, ব্যাংক লুটের ঘটনায় নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের আটটি চায়নিজ রাইফেল, দুটি এসএমজিসহ ১০টি অস্ত্র ও ৩৮০ রাউন্ড গুলি ও আনসার সদস্যদের চারটি শটগান, ৩৫ রাউন্ড গুলিসহ মোট ১৪টি অস্ত্র লুট করেছে সন্ত্রাসীরা। ক্রাইম টিম ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে তদন্ত করবে। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত করা হচ্ছে কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে। যৌথ বাহিনী সম্মিলিতভাবে লুটেরাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারের পরিবোরে মুক্তিপণ দাবির বিষয়টি তাঁর জানা নেই বলেও জানান তিনি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানায়, রুমা উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন রুমা সোনালী ব্যাংকের শাখা চার দিকে শতাধিক সশস্ত্র বাহিনী সদস্য ঘেরাও করে লুটের চেষ্টা করে কেএনএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।
এ সময় বাধা দেওয়ায় দায়িত্বরত পুলিশ, আনসার বাহিনীর সদস্যদের মারধর করে তাদের ১৪টি অস্ত্রও লুট করে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারাবি নামাজ শেষে ফেরারপথে সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। ব্যাংকে গেইটের তালা ভেঙে অফিসে থাকা সরঞ্জাম নষ্ট করে ফেলে এবং ব্যাংক নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মারধর করে।
রুমা সোনালী ব্যাংকের ক্যশিয়ার উথোয়াইচিং মারমা জানান, ডরমিটরির বাইরে যুব উন্নয়ন অফিসের পাশে চায়ের দোকানে চা খাইতে গেলে মুখে কালি লাগানো অপরিচিত তিনজন লোক তাঁকে অস্ত্রের মুখে দাঁড় করায় এবং তাঁর শরীরে তল্লাশি চালিয়ে পকেটে থাকা এক হাজার ৫০০ টাকা ও ব্যাংকের চাবি নিয়ে নেয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী আসার পর ব্যাংকে গিয়ে দেখেন অফিস সরঞ্জামগুলো ছড়ানো ছিটানো।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, সোনালী ব্যাংকের ঘটনা সম্পর্কে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ, ক্রাইমসিন টিমের উপস্থিতিতে ব্যাংকের ভল্ট চেক করে নিশ্চিত হওয়া গেছে সব টাকা। সুরক্ষিত রয়েছে। অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজার ও লুট হওয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধারে পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবোচনায় সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে রুমায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। পরিদর্শন শেষে আইজিপি বলেন, সন্ত্রাস দমনে সরকারের সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে কাজ করছে। আমাদের যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। কোনো দুষ্কৃতকারীর এটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতার কোনো ঘাটতি আছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
‘আমরা সতর্ক ছিলাম। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। লুট করা অস্ত্র উদ্ধার এবং অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধারে যৌথ বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো ট্রলারেন্স নীতি কার্যকরে কাজ করছে পুলিশ। সরকারের পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নানামুখী প্রদক্ষেপ চলমান রয়েছে।