ভৈরবের জুতা কারখানায় শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা
রমজানের ঈদ দরজায় কড়া নাড়ছে। কদিন বাদেই এই মহোৎসবে মাতবে দেশের বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠী। সেই উৎসবকে রাঙাতে পোশাক-আশাকসহ অন্যান্য কেনাকেটায় ব্যস্ত তারা। আর এই কেনাকাটার অন্যতম অনুষঙ্গ হলো পাদুকা বা জুতা। গায়ের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে পছন্দের এই পণ্যটি না কিনলে কি হয়?
আর ক্রেতাদের পছন্দের এই অতিপ্রিয় পণ্যটি তৈরি ও পাইকারি বিক্রিতে মহাব্যস্ত দেশের অন্যতম বড় পাদুকাশিল্পাঞ্চল ও মার্কেট ভৈরব। এখানকার ছোট-মাঝারি ও বড় সাত হাজারেরও বেশি কারখানার শ্রমিক এবং পাইকারি বিক্রির ছয়টি মার্কেটের কয়েক হাজার বিক্রেতার ব্যস্ত সময় কাটছে বর্তমানে। দেশের বিভিন্ন এলাকার ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাক-ডাকে তাই এখন এই এলাকায়।
ভৈরব পাদুকা কারখানা মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আল আমীন জানান, মূলতঃ শবেবরাতের পরের দিন থেকে ঈদের তিন দিনপূর্ব পর্যন্ত তাদের বিক্রির ধুম সময়। এ সময় তারা এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার জুতা পাইকারি বিক্রি করে থাকেন। এবার তাদের লক্ষ্যমাত্র প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা। সে হিসাবে শেষ মুহূর্তেই বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা।
তাদের ব্যবসাটাকে সিজনাল উল্লেখ করে পাদুকা কারখানা মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আল আমীন এই শিল্পের উন্নয়নে আলাদা ব্যাংক স্থাপন করে সহজ শর্তে ঋণের দাবি জানান। ইতোমধ্যে এই শিল্পের উন্নয়নে নানামূখী কাজ করা এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রতি তাদের ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করে কমপক্ষে শত কোটি টাকা করার দাবি জানান তিনি।
কারখানার সংখ্যা বেশি হলেও, বেশিরভাগ কারখানা ছোট এবং করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর আবারও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে তারা অনেক যুদ্ধ করে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন বলে দাবি পাদুকা কারখানা মালিক সমবায় সমিতির সভাপতির।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, রাজধানী ঢাকার পরই দেশের পাদুকাশিল্পের সবচেয়ে বেশি বিকাশ ঘটেছে নদীবন্দর ভৈরবে। বর্তমানে এখানকার হাতে তৈরি ছয়-সাত হাজার কারখানার পাশাপাশি আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ রপ্তানিমুখী ৩৫টির মতো বড়পরিসরের কারখানা আছে। আর এসব কারখানায় দেড় লাখেরও বেশি শ্রমিক কাজ করে। নারী শ্রমিক কাজ করে ৩০ হাজারের মতো। পাদুকা তৈরির কাঁচামালামাল, প্যাকেজিং ইত্যাদিসহ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে।
ছয়টি বৃহত্তর পাইকারি মার্কেট এবং ৫০টিরও বেশি পাদুকাশিল্প পল্লী নিয়ে এখানে গড়ে উঠেছে একটি বড় কর্ম ও অর্থনৈতিক বলয়। যার উন্নতির সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিও জড়িত বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। কিন্তু দফায় দফায় কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিপণনের ব্যবস্থা না থাকায় তারা কাঙ্ক্ষিত বাজারদর পাচ্ছেন না। ফলে তারা যেমন লাভবান হতে পারছেন না, তেমনি শ্রমিকদেরও মজুরি বৃদ্ধি করতে পারছেন না।
এ ক্ষেত্রে তারা সরকারি উদ্যোগে গার্মেন্টসশিল্পের মতো পাদুকাশিল্পের বাজার তৈরিতে সহায়তা কামনা করেছেন। আর তেমনটি হলে এই খাত থেকে সরকার প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে বলে অভিমত তাদের।
মজুরি নিয়ে এখানকার শ্রমিকদের অসন্তুষ্টি রয়েছে। শ্রমিকদের অভিযোগ, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এখনও তারা ন্যূনতম ৫০০ এবং সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা মজুরি পান। এই স্বল্প মজুরিতে তাদের সংসার চলে না। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।
ভৈরবে উৎপাদিত জুতা আকর্ষণীয় ডিজাইন, তুলনামূলক কম দাম এবং গুণগত মানের কারণে সারা দেশে এখন বেশ জনপ্রিয়। ব্যবসায়ীদের কাছেও বাণিজ্যিকভাবে ভৈরবের জুতা ব্যাপকভাবে সমাদৃত। এখানকার জুতার মান অনেক ভালো এবং দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় তারা বেশ ভালো মুনাফা করতে পারছেন।