‘শেখ হাসিনা-লুলার অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশ-ব্রাজিল সম্পর্ক আরও জোরদার করবে’
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা বলেছেন, ‘ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের তাদের অভিন্ন প্রচেষ্টা ঢাকা-ব্রাজিল সম্পর্ক আরও জোরদার করার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।’
ভিয়েরা ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘২০২৪ জি-২০ : ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্সির অগ্রাধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট লুলা ও প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি, নীতি ও অগ্রাধিকারের মধ্যেকার সাদৃশ্যগুলো এবং বিশেষ করে উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রয়াস আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য শর্ত তৈরি করেছে।’
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুদিনের সরকারি সফরে গতকাল এখানে আসেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর সঙ্গে বৈঠক করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে মাউরো ভিয়েরা বলেন, ‘ব্রাজিল ও প্রেসিডেন্ট লুলার প্রতি তার উচ্চ শ্রদ্ধার কথা তার কাছ থেকে শুনে আমি আনন্দিত, যা পারস্পরিক।’
তিনিই প্রথম ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন উল্লেখ করে ভিয়েরা বলেন, ঢাকায় তার উপস্থিতি প্রমাণ করে, ব্রাজিল বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়।
মাউরো ভিয়েরা বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে অসামান্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করার পাশাপাশি ঢাকা ও ব্রাসিলিয়ার মধ্যে সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রেই যথেষ্ট জোরদার হয়েছে।’ তিনি ২০২৪ সালে জি-২০ প্রেসিডেন্সি হিসেবে ব্রাজিলের অগ্রাধিকার তুলে ধরেন। ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর ভারতের কাছ থেকে ব্রাজিল দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল।
‘ব্রাজিল বৈষম্যের বিষয়টিকে জি-২০ এর আলোচ্যসূচির কেন্দ্রে রেখেছে’ উল্লেখ করে মাউরো ভিয়েরা বলেন, ‘একটি ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব এবং একটি টেকসই গ্রহ নির্মাণ’ নীতিবাক্যের অধীনে প্রেসিডেন্ট লুলা তিনটি সাধারণ অগ্রাধিকার সংজ্ঞায়িত করেছেন—সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই, জ্বালানির রূপান্তর এবং এর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত মাত্রায় টেকসই উন্নয়নের প্রচার এবং বিশ্বব্যাপী শাসন প্রতিষ্ঠানের সংস্কার।’
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ব্রাজিল বিশ্বাস করে, জি-২০ হলো এমন একটি ফোরাম, যা বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জগুলোর জন্য সম্মিলিত সমাধানগুলোকে উৎসাহিত করছে। বিশ্বের জনসংখ্যা ও জিডিপি এবং সংস্থার বৈচিত্র্যময় সদস্যপদের পরিপ্রেক্ষিতে ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য একটি বৈশ্বিক এজেন্ডা গঠনে গ্রুপটির একটি অনন্য ও প্রভাবশালী ভূমিকা রয়েছে।’
মাউরো ভিয়েরা বলেন, ‘ব্রাজিল বিশ্বাস করে যে, জি-২০ অবশ্যই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করবে এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচন করবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিয়েরা বলেন, ‘ব্রাজিল আরও বিশ্বাস করে, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট (ইউএনএফসিসিসি) এবং এর প্যারিস চুক্তির অধীনে আমাদের সাধারণ লক্ষ্য অর্জনে জি-২০ এর অর্থনীতি-বিস্তৃত প্ল্যাটফর্মগুলোর ভূমিকা এবং আর্থিক খাতের নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং কেবল বহুপাক্ষিকতাবাদ, সংস্কার ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমেই তা মোকাবিলা করা সম্ভব।’
ভিয়েরা বলেন, এই চেতনায় ব্রাজিলের জি-২০ প্রেসিডেন্সি বিশ্বাস করে, গ্রুপটির এমন একটি জাতিসংঘের লক্ষ্যে কাজ করা উচিত, যা তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রধান বৈষম্যগুলো মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে আরও কার্যকর হবে।