আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকার গঠন দিবস
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিন আজ (১০ এপ্রিল)। ১৯৭১ সালের এ দিনে গঠিত হয় বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীন সরকার। যে সরকারের নাম ছিল ‘মুজিবনগর সরকার’। পরে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে শপথ গ্রহণ করে। নবগঠিত সরকারের সবাই ছিলেন ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে বিজয়ী জনপ্রতিনিধি। আর এ সরকার গঠনের মধ্য দিয়েই শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথচলা।
মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং উপরাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম (অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি)। সে সময় পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। সৈয়দ নজরুল ইসলাম পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেন।
১০ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করার পাশাপাশি মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে আরও তিনজনকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। তারা হলেন—খন্দকার মোশতাক আহমদ (পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ), এম মনসুর আলী (অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প) ও এ এইচ এম কামারুজ্জামান (স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ, পুনর্বাসন ও কৃষি)।
সদ্য প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
সরকার গঠনের পরদিন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তাজউদ্দীন আহমদ প্রথম একটি বেতার ভাষণ দেন।
একদিকে, পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা, অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বিশ্ব জনমত গঠনের মাধ্যমে স্বীকৃতি আদায় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করা ছিল নব গঠিত সরকারের চ্যালেঞ্জ।
এদিকে, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রীরা শপথ নিলেও ১৮ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদের প্রথম সভায় মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করা হয়। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, কূটনৈতিক ও প্রচার ক্ষেত্রে বিশ্ব জনমত গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল অস্থায়ী এ সরকার।
মুজিবনগর সরকার সফলতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। এ সরকারের দক্ষতার ফলেই মাত্র ৯ মাসে বাংলাদেশ হানাদার পাকিস্তানিদের দখলমুক্ত হয়েছিল। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। তাই, ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয়, অমলিন একটি দিন।