যাত্রীদের মারধরে নয়, অন্য বাসের চাপায় সেই শ্রমিকদের মৃত্যু!
বাড়তি ভাড়া নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে আশুলিয়ায় যাত্রীদের মারধরে বাস চালক ও কন্ডাক্টরের মৃত্যু হয়নি। তাদের মৃত্যু হয়েছে অন্য একটি বাসের চাপায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান, সিসিটিভির ফুটেজ, মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন ও হেলপারকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে আজ বুধবার (১০ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনার পরপর স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছিল, গত সোমবার দুপুরে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের মোজারমিল এলাকায় চন্দ্রাগামী ইতিহাস পরিবহণের বাসের চালক ও হেলপারের সঙ্গে যাত্রীদের ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে উত্তেজিত যাত্রীরা বাসের চালক ও হেলপারকে মারধর করে। এ সময় দৌড়ে পালিয়ে চালকের আরেক সহকারী বেঁচে যান। পরে পথচারীরা চালক ও হেলপারকে উদ্ধার করে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তাদের মৃত্যু হয়। পরে কাশিমপুর থানার পুলিশ মরদেহগুলো সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে পাঠিয়েছে।
পরে বাসের হেলপার আব্দুর রহমান পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ঘটনার সময় বাড়তি ভাড়া আদায় করা নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কন্ডাক্টরের তর্ক–বিতর্ক হচ্ছিল। তখন চালক সোহেল রানা হেলপারকে গাড়ি চালাতে বলে ঝামেলা মেটাতে গেটের কাছে যান। এ সময় সোহেল রানা ও কন্ডাক্টর হৃদয় মিলে সড়ক থেকে যাত্রীদের ডাকছিলেন। পাশাপাশি বাড়তি ভাড়া নিয়ে বাসের ভেতরে যাত্রীর সঙ্গে তর্ক–বির্তকও চলছিল। এ সময় আরেকটি বাস গেটে থাকা বাবু ও হৃদয়কে ধাক্কা দেয়। তারা রাস্তায় পড়ে যান। গাড়ির জানালা দিয়ে পালিয়ে যান হেলপার আব্দুর রহমান। পরে তিনি আবার ফিরে এসে দেখেন সোহেল রানা ও হৃদয় রাস্তায় পড়ে আছেন। পরে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সুমন শেখ বলেন, ‘ইতিহাস পরিবহণের ওই বাসের গেটে দুজন ঝগড়া ও হাতাহাতি করছেন। এরপর একটি বড় বাস তাদের ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। এরপর তাদের নিচে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। আর বাসের ভেতরে চালকের আসনে বসে থাকা কালো গেঞ্জি পরা এক লোক জানালা দিয়ে লাফিয়ে পালিয়ে যান। পরে আহত দুজনকে উদ্ধার করে পুলিশ ও লোকজন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’
ঢাকা জেলার উত্তর বিভাগের (ক্রাইম ও ট্রাফিক) দায়িত্বে থাকা সদ্য পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, ‘আব্দুর রহমান নিজেকে বাঁচাতে প্রথমে যাত্রীদের সঙ্গে মারামারির গল্প সাজিয়েছিলেন। মরদেহে ইনজুরি মার্ক (আঘাতের চিহ্ন) যে রকম থাকার কথা, সেই মার্ক বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। একজনের বুকে, অন্য জনের মাথার দিকে খানিকটা আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। ১০ থেকে ১২ জন মিলে কাউকে উপর্যুপরি আঘাত করলে কিংবা পেটালে যে রকম আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা সে রকমটি পরিলক্ষিত না হলে আমাদের সন্দেহ হয়।’
আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, ‘আরও নিশ্চিত হতে একজন প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি নেওয়া হয়। তিনি জানান, দুজন দুই বাসের মাঝখানে চাপ খেয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে বাসের স্টিয়ারিংয়ে হেলপার আব্দুর রহমান ছিলেন। প্রতিযোগিতার কারণে অপর একটি বাসের চাপায় দুজনের মৃত্যু হয়।’
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, ‘বিষয়টি আগে হত্যাকাণ্ড মনে করে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হলেও এখন ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেওয়ায় দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর বিষয়ে মামলা নেওয়া হবে। জড়িত বাসটিকেও শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’