তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে রোগী, প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ
তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। এরইমধ্যে তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে সাড়ে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত টানা চার দিন চুয়াডাঙ্গা ছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রার তালিকায়। সেখানের হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। এমন এক পরিস্থিতিতে ‘হিট স্ট্রোকের’ শঙ্কার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন পরামর্শের পাশাপাশি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার কথা বলেছেন তারা। এদিকে, ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর, সরকারের পক্ষ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
তীব্র তাপপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গার জনজীবন বিপর্যস্ত। রাস্তাঘাট জনশূন্য। খেটে খাওয়া মানুষেরা পড়েছেন বিপাকে। গরমে অসুস্থ্য হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সীরা। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসূত্র বলছে, গরমে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ১০০ শয্যার হাসপাতালটির বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৩৬১ জন ভর্তি আছে। ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বেশি।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া কার্যালয় আজ শনিবার দুপুর ৩টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৪২ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। যদিও এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৪২ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুন্সি মো. আতাউর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ১০০ শয্যার হাসপাতালে বর্তমানে ডায়রিয়া, শিশু ওয়ার্ড, মেডিসিন বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৩৬১ রোগী ভর্তি রয়েছে। যদিও হাসপাতালে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন ও ওষুধ মজুদ রয়েছে। আর আইভি ফ্লুইডের চাহিদা খুলনায় পাঠানো হয়েছে।
তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. আতাউর রহমান বলেন, এ সময়ে জনসাধারণকে বলব, প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন ঘরের বাইরে বের না হয়। যদি কেউ বের হয়, তবে তিনি যেন ছাতা ও ক্যাপ ব্যবহার করেন। ঘন ঘন বিশুদ্ধ খাবার পানি পান করতে হবে। খোলা আখের রস খাওয়া যাবে না। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
এদিকে আইসিডিডিআরবি তাদের ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে তাপপ্রবাহ নিয়ে সতর্কতামূলক পোস্ট ও করণীয় জানিয়েছে। তারা এক পোস্টে বলেছে, ‘সারা দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। অতিরিক্ত গরমে হতে পারে হিট স্ট্রোক, পানিশূন্যতার মতো মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। এ সময় বাড়ে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। তীব্র গরমে কিছু নিয়ম মেনে চলে নিজের ও পরিবারের সকলের সুস্থতা নিশ্চিত করুন।’
করণীয় বিষয়ে আইসিডিডিআরবি বলছে, ‘দিনের বেলায় যথাসম্ভব বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকুন, রোদ এড়িয়ে চলুন। বাইরে বের হলে ছাতা, টুপি বা ক্যাপ বা কাপড় দিয়ে মাথা যথাসম্ভব ঢেকে রাখুন। হালকা রঙের, ঢিলে ঢালা এবং সম্ভব হলে সুতির জামা পরুন। প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করুন। সহজে হজম হয়, এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং বাসি, খোলা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। দিনের বেলায় একটানা শারীরিক পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকুন। সম্ভব হলে একাধিকবার পানির ঝাপটা নিন বা গোসল করুন। প্রস্রাবের রঙের দিকে নজর রাখুন, তা হলুদ বা গাঢ় হলে অবশ্যই পানি পানের পরিমাণ বাড়ান। ঘরের পরিবেশ যেন অতিরিক্ত গরম বা ভ্যাপসা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। বেশি অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।’
আইসিডিডিআরবি বলছে, সব থেকে ঝুঁকিতে আছে শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, শ্রমজীবী ব্যক্তি, যেমন রিকশাচালক, কৃষক, নির্মাণশ্রমিক, যাদের ওজন বেশি, যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ, বিশেষ করে যাদের হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপ আছে।a