প্রতীক্ষার বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে প্রাণ গেল ১০ জনের
টানা তীব্র তাপপ্রবাহের মাঝে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে। এই বৃষ্টিতে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ দেশবাসী কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চাইলেও নতুন করে উৎকণ্ঠা বাড়িয়েছে বজ্রপাত। বৃষ্টির সময় দেশের বিভিন্ন জেলায় বজ্রপাতে অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় চারজন, রাঙামাটিতে তিনজন, কক্সবাজারে দুজন ও খাগড়াছড়িতে একজন বজ্রাঘাতে প্রাণ হারান।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২ মে) ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। এনটিভির জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
কুমিল্লা
কুমিল্লার চার উপজেলা—চান্দিনা, সদর দক্ষিণ, বুড়িচং ও দেবিদ্বারে বজ্রাঘাতে চারজন নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নিহত হন তারা। নিহতরা হলেন—চান্দিনা উপজেলার বরকইট ইউনিয়নের কিছমত-শ্রীমন্তপুর গ্রামের সুন্দর আলীর ছেলে দৌলতুর রহমান (৪৭), সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ার ইউনিয়নের উত্তর সূর্যনগর গ্রামের আতিকুল ইসলাম (৫০), দেবিদ্বার উপজেলার ধামতী গ্রামের মোখলেছুর রহমান (৫৮) এবং বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পাচোরা গ্রামের কুদ্দুস মিয়ার ছেলে আলম হোসেন।
সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও স্থানীয় সূত্রে চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। চান্দিনা থানার ওসি আহাম্মদ সনজুর মোরশেদ বলেন, ‘স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে ফোন করে একজনের মৃত্যুর সংবাদ জানিয়েছেন। ওই ব্যক্তি কৃষি জমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাত হলে মারা যান।’
বুড়িচংয়ে বজ্রপাতে একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার আবুল হাসানাত।
দেবিদ্বার থানার ওসি মো. নয়ন মিয়া বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃষ্টির কারণে ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি। তবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
রাঙামাটি
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে বৃষ্টি নেমে আসে গতকাল বৃহস্পতিবার। এ সময় বজ্রপাতে অন্তত তিনজনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। গতকাল রাঙামাটি শহরের সিলেটি পাড়া ও বাঘাইছড়ি উপজেলার রুপাকারী ইউনিয়ন ও সাজেক ইউনিয়নে এসব দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। একই সময়ে জেলায় আরও অন্তত সাত জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বজ্রপাতে নিহতরা হলেন—রাঙামাটি শহরের সিলেটি পাড়ার বাসিন্দা মো. নজির (৫০), বাঘাইছড়ি উপজেলাধীন রুপাকারী ইউনিয়নের বাসিন্দা বাহারজান বেগম (৫৫) এবং সাজেকের লংথিয়ান পাড়ায় তনিবালা ত্রিপুরা (৩৭)।
রূপকারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যাসমিন চাকমা জানান, ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মুসলিম ব্লক গ্রামের লাল মিয়ার স্ত্রী বাহারজান বেগম গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিরীন আক্তার বলেন, ‘অনেক দিন পর (বৃহস্পতিবার) সকালে বজ্রসহ বৃষ্টি হয়। এতে বাহারজান নামে একজন এবং সাজেকে তনিবালা ত্রিপুরা নামের আরেক নারী নিহত হয়। নিহতদের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।’
বাঘাইছড়িতে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেওয়ার সময় বজ্রপাতে সাত জন আহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আহতরা হলেন—তরুণ চাকমা, তৃণা চাকমা, রবীন্দ্র চাকমা, সুষমলাল চাকমা, অক্ষয়মনি চাকমা, পাত্থর চাকমা ও অমরজ্যোতি চাকমা।
অন্যদিকে, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. শওকত আকবর জানান, (বৃহস্পতিবার) সকালে শহরের সিলেটি পাড়া থেকে একজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তিনি বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন।
কক্সবাজার
কক্সবাজারের পেকুয়ায় বজ্রপাতের পৃথক ঘটনায় দুই লবণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালের দিকে পেকুয়া উপজেলার মগনামা ও রাজাখালী ইউনিয়নে লবণ মাঠে বজ্রপাতে এ প্রাণহানি ঘটে।
বজ্রপাতে নিহতরা হলেন—মগনামা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কোদাইল্যাদিয়া এলাকার জমির উদ্দিনের ছেলে দিদারুল ইসলাম (৩০) ও রাজাখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ছরিপাড়া এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে মো. আরফাত (১২)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে কক্সবাজারে বৃষ্টি শুরু হয়। ভোরে ওই দুই শ্রমিক লবণ নিতে মাঠে ছুটে যায়। এ সময় আকাশে ঘন ঘন বজ্রপাত হচ্ছিল। একপর্যায়ে লবণ মাঠেই তাদের ওপর বজ্রপাত হয়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাদের পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, (বৃহস্পতিবার) সকালে রাজাখালী ও মগনামা এলাকা দুই লবণ শ্রমিকের নিথর দেহ হাসপাতালে আনা হয়। তবে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তাদের মৃত্যু হয়। বজ্রপাতের আঘাতে তারা মারা যায়।
খাগড়াছড়ি
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ঝড়বৃষ্টিতে আম কুড়ানোর সময় বজ্রপাতে ইয়াছিন আরাফাত (১৩) নামে এক স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালের দিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলার বড়নাল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড ইব্রাহিম পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। বজ্রপাতে নিহত ইয়াছিন আরাফাত বড়নাল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইব্রাহিম পাড়ার বাসিন্দা ইউসুফ মিয়ার ছেলে।
বড়নাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াছ হোসেন বলেন, বজ্রপাতে ইয়াছিন আরাফাতের মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডেজী চক্রবর্তী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালের দিকে বজ্রাঘাতে এক শিক্ষার্থী মারা গেছে। এ মৃত্যু বড়ই মর্মান্তিক। তাদের পরিবারকে প্রশাসনিক সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’