বিরাজনীতিকরণে বিচারবিভাগকে ব্যবহার করছে সরকার : মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য বিচারবিভাগকে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন।
আজ রোববার (১২ মে) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গত ৮ই মে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারের ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে যে সংকট থেকে উৎরে গেছে কিন্তু এটি আরও গভীর হয়েছে। এখনি যদি সরকারের অনুধাবন না হয় তাহলে সামনে সংকট আরও ঘণীভূত হবে। ডামি নির্বাচন হচ্ছে, তারাই প্রার্থী বাছাই করছে, তারাই বিরোধীদল কারা হবে নির্ধারণ করে দিচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে আন্দোলন চলার সময় নির্বাচনের আগেই বিএনপির দুই হাজার নেতাকর্মীকে পূর্বের মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীদের সাজা দেয়া হয়েছে। এখনও অনেক নেতাকর্মী কারাগারে আছে, জামিন মিলছে না।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সরকারের সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য বিচারবিভাগকে ব্যবহার করা হয়েছে । প্রধানমন্ত্রী নিজেই দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘বিরোধীদলের রাজনীতিবিদের কারাগারে রেখে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চাইছে। মূল লক্ষ্য দেশে রাজনীতিকে নির্বাসনে রাখা, তারাই রাজনীতি করবে। নির্বাচনেও তারা তারাই নির্বাচন করেছে। তামাশা চলছে, এজন্য বিচার প্রক্রিয়াকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘মূল সমস্যা হচ্ছে। জনগণের প্রতি কোনো জবাবদিহিতা নেই। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঠিক থাকল কি থাকল না, এটা নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়ে গেছে ‘
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় ক্ষোভ প্রকাশ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনিয়ম, দূর্নীতি এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, বিএনপি এর নিন্দা জানায়। অর্থনীতিখাতে সবচেয়ে বেশি দূর্নীতি চলছে, ব্যাংকখাত ধ্বংস হয়ে গেছে।’
নিবর্তনমূলক আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতেরও ভয়াবহ অবস্থা, এটা আশঙ্কাজনক। সরকার জনস্বাস্থ্য নিশ্চিতে গুরুত্ব দিচ্ছে না, অনীহা দেখাচ্ছে। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে আমদানিকৃত সকল পণ্য দেশে প্রবেশের পর পরীক্ষা নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। যদিও সরকার করবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’
ভারতের ৫২৭টি পণ্যে বিষাক্ত উপাদান পাওয়া গেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল মানুষের অধিকার বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি'র আন্দোলন অব্যাহত থাকবে জানিয়ে বলেন, ‘জনগণের কাছে সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই, কোনো ম্যান্ডেট নেই, সরকারের মধ্যে দাম্ভিকতা তৈরি হয়েছে সেজন্য জনগণের সমস্যা গুরুত্ব পাচ্ছে না, ক্ষমতা টিকিয়ে থাকলেই হলো। একটা গোত্র তৈরি করেছে সরকার, যারা তাদেরকে ক্ষমতায় রাখবে। সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করে ফেলেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই রাষ্ট্রকে কিভাবে পরনির্ভরশীল করা যায় এবং নিজেদের বিশেষ গোত্রকে সুযোগ দেয়া যায় সেভাবেই কাজ করছে ক্ষমতাসীরা।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়ে গেছে, কখন ব্যর্থ রাষ্ট্র তৈরি হয় যখন রাষ্ট্রের কাঠামো ভেঙে পরে। আজকে কোথায় টাকা ছাড়া কাজ হয় না। এটাই প্রমাণ করে রাষ্ট্র টোটালি ফেইলর। সরকার ছাড়া এখানে এখন আর কেউ নেই, যেটা তারা চেয়েছে তাই করেছে। গোটা দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। পুরোপুরি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করে ফেলেছে। আজকে মেগা লুট চলছে।’
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল লুয়ের বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন ‘বাংলাদেশের জনগণের ওপর বিএনপির আস্থা রয়েছে, বাইরের কারোর ওপর নির্ভর করে না। জনগণের ওপরই আস্থা রাখতে চায়। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া তার সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছেন না। পরিকল্পিতভাবে এখন জিয়াউর রহমানের অবদান নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে, খলনায়কে পরিণত করা হচ্ছে। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, সাময়িক জটিলতা আসতে পারে তবে বাংলাদেশের মানুষ কখনই পরাজিত হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া তার জীবন নিয়ে লড়াই করছেন, স্বাস্থ্য খুবই খারাপ। তিনি ২৪ ঘন্টায় শারীরিক চেকআপে আছেন।’
উল্লেখ, গত বছর ২৮ অক্টোবরের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবারও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।