এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আনার আলোচনা
এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার বিষয়ে আলোচনা করেছে সংসদীয় কমিটি। মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। আজ বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, কমিটির আগের বৈঠকে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের পেনশন নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, সেখানে কমিটির সদস্য মোতাহার হোসেন বলেছেন— এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসরের পর পেনশনের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। এমনকি অনেকেই পেনশনের অর্থ না পেয়ে মারা যান। আরেক সদস্য আহমদ হোসেন বলেন, যেহেতু এই সমস্যার দ্রুত সমাধানের কোনও সম্ভাবনা নেই, তাই শিক্ষকদের পেনশন এককালীন পরিশোধ না করে দুটো কিস্তিতে প্রদানের অনুরোধ জানান তিনি।
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের পেনশন এককালীন পরিশোধ না করে সরকারি কর্মচারীদের অর্ধেক এককালীন এবং বাকিটা মাসিক পেনশন হিসেবে দেওয়া যায় কিনা, তা ভেবে দেখার অনুরোধ করেন।
বৈঠকে অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী বলেন, শিক্ষকদের কাছ থেকে আদায়কৃত চাঁদা এবং স্থায়ী আমানতের সুদ মিলে বছরে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা দাঁড়ায়। আর বর্তমানে সুদের হার বাড়ায় এ খাত থেকে বছরে ৫০-৫৫ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু শিক্ষকদের দাবিকৃত অবসর ভাতা পরিশোধে প্রয়োজন ৪৪৪ কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারের অনুদান বাড়ানোর পাশাপাশি ষষ্ঠ থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত ২ কোটি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে ১০০ টাকা, পাবলিক পরীক্ষার সময় প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১০০ টাকা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ডের তহবিল থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিলে স্থায়ী সমাধান সম্ভব।
বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার বিষয়ে পর্যালোচনা করে একটি রিপোর্ট কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মন্ত্রীর প্রস্তাবের বিষয়টি কমিটিতে সুপারিশ আকারে আনা হয়। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে কোনও প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। ওই সুপারিশের অগ্রগতি প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে— বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে পর্যালোচনা করে একটি রিপোর্ট কমিটিতে উপস্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে, করে নাগাদ প্রতিবেদন দেওয়া হবে তা স্পষ্ট করা হয়নি।
উল্লেখ্য, সরকারের তরফ থেকে ইতোমধ্যে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী জুলাই থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের নবনিযুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে একটি প্রযোজ্য হবে বলে সরকারের এক আদেশে বলা হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করেছেন।
জানা গেছে, কমিটির আগের বৈঠকে কমিটির এক সদস্য বলেন, পাঠ্যপুস্তকে যেসব কাগজ ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিম্নমানের। একইসঙ্গে ওই সদস্য আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজে অসমতা রয়েছে। কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় অনেক বেশি কাজ হয়েছে, আবার কিছু এলাকায় খুবই কম হয়েছে।
কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে কমিটির সদস্য আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে ছাত্রদের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত হচ্ছেন, অতীতে যা ছিল অকল্পনীয়। এটা বন্ধে শিক্ষা ব্যবস্থাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও অংশ নেন— কমিটির সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবদুল মজিদ, আহমদ হোসেন, বিপ্লব হাসান, আব্দুল মালেক সরকার ও আজিজুল ইসলাম।