নেত্রকোনার ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে পিস্তল, গুলি ও জিহাদী বই উদ্ধার
নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলহাটি ইউনিয়নের ভাসাপাড়া গ্রামের একটি বাড়িতে জঙ্গিদের অবস্থান ছিল সন্দেহে আজ শনিবার (৮ জুন) দুপুর থেকে বাড়িটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতেই গোপন সূত্রের ভিত্তিতে পুলিশের একটি বিশেষ টিম আজ শনিবার দুপুরে প্রাথমিক তল্লাশি চালায়। এসময় একটি ভারতীয় পিস্তল, ১৭ রাউন্ড গুলি ও একটি ডামি একে ৪৭ রাইফেলসহ জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নেত্রকোনার পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ। বোমা বিস্ফোরণের দ্রব্য আছে ধারণা থাকায় আরও অনুসন্ধানের জন্য আজ রাতেই ঢাকা থেকে বিশেষ বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম আসবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটিতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভাসাপাড়া এলাকায় জঙ্গি সন্দেহে ঘিরে রাখা ওই বাড়ি আটপাড়া উপজেলা নোয়াপাড়া গ্রামের আবদুল মান্নার নামের এক ব্যক্তি প্রায় ২০ বছর আগে নির্মাণ করেন। আবদুল মান্নান পেশায় ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষক। তিনি সেখানে একটি কলেজ স্থাপন করতে চান। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। দুই বছর আগে বাড়িটি তিনি আরিফ নামের এক ব্যক্তির কাছে ভাড়া দেন। ভাড়া দেওয়ার পর থেকে ভাড়াটিয়ার বাড়ির সীমানাপ্রাচীর আরও উঁচু করেন। এরপর নারকেলগাছ, আমগাছ ধরে সীমানাপ্রাচীরে প্রায় ২০টির মতো সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়। বাড়িটির ভেতরে দুটি পুকুর রয়েছে। ওই বাড়িতে স্থানীয় কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। আবার দিনের বেলাও কোনো ব্যক্তিকে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে কিংবা বের হতে দেখেনি এলাকাবাসী। দুই বছর আগে যে ব্যক্তিকে ভাড়া দেওয়া হয়, তাকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় লোকজন বলেন, পুলিশ আসার খবর টের পেয়ে জঙ্গিরা হয়তো পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারে।
এ দিকে জানা যায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দুপুর ১টার দিকে নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি আবুল কালামের নেতৃত্বে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় বাড়িটির নিচতলার একটি কক্ষ থেকে বিদেশি পিস্তল, ১৭ রাউন্ড গুলি, প্রচুর খেলনা পিস্তল, দুটি ওয়াকিটকি, একটি ল্যাপটপ, একটি হ্যান্ডকাপ, এক বস্তা জিহাদি বইসহ বিভিন্ন জিনিস পাওয়া যায়।
পুলিশের ধারণা, বাড়িটিতে বোমা–জাতীয় বিস্ফোরকদ্রব্য থাকতে পারে। ঘটনাস্থল নেত্রকোনা পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমদ সন্ধ্যায় পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের বিশেষায়িত টিম কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাড়িটি একটি জঙ্গি আস্তানা। এখানে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। বোমাবিশেষজ্ঞ টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আরো ভেতরে প্রবেশ করার পর বিস্তারিত বলা যাবে।
এ বিষয়ে এন্ট্রি টেরিজিয়ম ইউনিট ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক আসাদুল্লাহ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের বিশেষজ্ঞ দল, সোয়াট ইউনিটের বিশেষজ্ঞ দলকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা এলে ভেতরে গিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করা হবে।’